সর্বশেষঃ

আতা ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাঃ

আতা আমাদের দেশের সুপরিচিত এবং সুস্বাদু একটি ফল। অনেকের কাছে আতা খুব পছন্দের ফল। আতা খেতে ভারি মিষ্টি এ ফল খুব সজলভ্য। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফলটি সহজে পেট ভরাতেও দারুণ সাহায্য করে। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে গুণে ভরা আতাফল। স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমানে অনন্য আতা ফলের গুণের শেষ নেই। আতা অ্যানোনেসি পরিবারভুক্ত এক ধরনের যৌগিক ফল। এই ফলটিকে বাংলায় ‘আতা’, ‘শরিফা’, ‘নোনা’- এই তিনটি নামে ডাকা হয়। এখন আতা ফলের মৌসুম।

ছোট ছোট কোষ থাকে এই ফলের ভিতরে। প্রতিটি কোষে একটি করে বীজ থাকে। বীজের আশেপাশে থাকা রসালো এবং নরম অংশই খেতে হয়। কাঁচা ফলের বীজ সাদা এবং পাকা ফলের বীজ কালো হয়। তবে বীজ বিষাক্ত। এই ফল লালচে এবং সবুজ, দুই ধরনের হয়ে থাকে।

শুধু স্বাদে নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও আতা উপকারী ফল। এর রয়েছে নানা গুণ। ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ আতা শরীরের জন্য খুব ভাল। ফলটিতে ভিটামিন সির মতো নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। সবুজ রঙের আতার চেয়ে লালচে আতায় ক্যালরি এবং আয়রন বেশি থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা এবং আমিষজাতীয় খাদ্যোপদান রয়েছে। চোখ থেকে চুল, হার্টের অসুখ থেকে হাঁপানি সবকিছুর সমাধান মিলবে দক্ষিণ আমেরিকার এই ফলে।

আতা ফলের পুষ্টিগুণঃ

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই ফলটির প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায় শর্করা ২৫ গ্রাম, পানি ৭২ গ্রাম, প্রোটিন ১.৭ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩৩ আইইউ, ভিটামিন সি ১৯২ মিলিগ্রাম, থিয়ামিন ০.১ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাবিন ০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিয়ান ০.৫ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড ০.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২১ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩৮২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৪ মিলিগ্রাম।

আতা ফলের উপকারিতাঃ

১। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে

আতাফলে রিবোফ্লাভিন ও ভিটামিন সি আছে। আর এই ভিটামিন উপস্থিতির কারণে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। সে ক্ষেত্রে আতা ফল অনেক সহায়ক। যাদের চোখের সমস্যা তারা আতা ফল খাবেন, এতে আপনার চোখের উপকার হবে।

২। হজমশক্তি বৃদ্ধিতে

খাবারের হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে আতা ফলে থাকা ফসফরাস উপকারী ভূমিকা পালন করে। এর খাদ্যআঁশ হজমশক্তি বৃদ্ধি করে ও পেটের সমস্যা দূর করে। তাই যাদের হজমের সমস্যা তারা এই আতা ফল খেলে অনেক উপকার পাবেন।

৩। আমাশয়ে

আতা গাছের মূলের ছালের রস ২০/২৫ ফোঁটা ৭/৮ চা চামচ দুধ সহ খেতে হবে, তবে ছাগলের দুধ হলে ভাল হয়। আথবা আতা গাছের মূলের ছাল চূর্ণ ২০০ মিলিগ্রাম একবার বা দুইবার খেতে হবে। এর দ্বারা ২/৩ দিনের মধ্যে আমাশয় ভালো হয়ে যাবে।

৪। হাড় মজবুত করতে

আতা ফলে প্রচুর ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। আর শরীরের হাড় গঠন ও মজবুত রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়াম সরবারহ করতে সক্ষম এই আতা ফলটি। তাই হাড় মজবুত করতে আতা ফল খাওয়া উচিত।

৫। রক্তে নিস্তেজ ভাব কমে গেলে

ঠাণ্ডার কোনো ব্যধি না থাকলে তাহলে পাকা আতা ফলের শাঁসের রস ২/৩ চা চামচ করে সকালে ও বিকালে ২ বার খেলে রক্তের নিস্তেজ ভাবটা সেরে যায়। আবার যদি রস করা সম্ভব না হয় তাহলে পাকা আতা এমনি খেলেই চলবে।

৬। চুল ও ত্বকের যত্নে

আতা ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা একটি উন্নতমানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্রি রেডিক্যাল নিয়ন্ত্রণে রক্ষা করে। এছাড়া ত্বকে বার্ধক্য বিলম্বিত করে। এতে উপস্থিত ভিটামিন এ চোখ, চুল ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

৭। অপুষ্টিজনিত কৃশতায়

শিশু, যুবক যুবতী বৃদ্ধ যে কোনো বয়সেরই হোক এ ক্ষেত্রে পাকা আতাফলের রস ২/৩ চা চামচ করে একটু দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে ধীরে ধীরে পুষ্টি সঞ্চার হয় এবং কৃশতাও দূর হয়। অপুষ্টিজনিত কৃশতায় আতা ফলের রস অনেক উপকারি।

৮। হৃৎপিণ্ডের রোগ প্রতিরোধে

আতা ফলের ম্যাগনেসিয়াম মাংসপেশির জড়তা দূর করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এর পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি৬ রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৯। উকুনে

মাথায় উকুন হলে নির্বংশ করতে আতাপাতার রস ২ চা চামচ তার সঙ্গে ২/১ চা চামচ পানি মিশিয়ে চূলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখলে উকুন মরে যাবে। একদিনে না গেলে ২/৩ দিন পর আবার লাগাতে হবে। এ ছাড়া পাতা বেটে লাগালেও উকুন মরে যাবে। তবে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে যেন চোখে না লাগে, তাহলে চোখ জ্বালা করবে ও লাল হয়ে যাবে। তাছাড়া এই রস লাগানোর পর মাথা ঘুরতে থাকলে না লাগানো উচিৎ। তবে প্রথমে আধা চামচ পানি মিশিয়ে লাগিয়ে দেখা ভালো।

১০। রক্তপিত্তজনিত দাহরোগে

আতা ফলের শাঁসের রস রক্তের শক্তি বৃদ্ধিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অল্প রক্তচাপের কারণে মাঝে মাঝে বমির সংগে রক্ত বের হয় আবার বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক মনে হয়, আবার কারো কারো আগ্নির বলও থাকেনা। এ ক্ষেত্রে পাকা আতার রস ২/৩ চা চামচ করে খাওয়ালে সেরে যাবে।কারো কারো দেহে সর্বোদা একটা দাহ ভাব আসে তাদের জন্য আতাফল খেলে সেটাও চলে যাবে।

১১। খনিজ পদার্থ সমূহ সরবরাহে

আতা ফল শরীরের ডিএনএ ও আরএনএ সংশ্লেষণ, শক্তি উৎপাদনের জন্য ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি ও খনিজ পদার্থসমূহ সরবরাহ করে থাকে।

১২। রোগ-প্রতিরোধে

আতাফলে থাকা উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। দুরারোগ্য ব্যাধিকে তাড়িয়ে আপনাকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। এছাড়া আতা ফলের খাদ্য উপাদান এনিমিয়া প্রতিরোধ করে থাকে।

☆ সতর্কতাঃ

যাদের সুগারে সমস্যা আছে তাদের হিসেব করে আতা খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিকের রোগীদের একদমই আতা খাওয়া চলবে না।

ড. উজ্জল কুমার নাথ
প্রফেসর
কৌলীতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *