সর্বশেষঃ

ইউক্রেইনে ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহারের অভিযোগ রাশিয়ার বিরুদ্ধে

ইউক্রেইনে চলমান যুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা ও ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে; বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ প্রাণঘাতী ওই অস্ত্র ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, রুশ বাহিনী ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে বলে মনে হচ্ছে।

উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের একটি প্রিস্কুলে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক মানুষের ওপরও রুশ বাহিনী বোমা ফেলেছে বলে অভিযোগ অ্যামনেস্টির।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মার্কারোভা সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়া তার দেশে থার্মোবারিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা ভ্যাকুয়াম বোমা নামে পরিচিত।

“রাশিয়া যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে চাইছে তা ব্যাপক। তারা আজ (সোমবার) ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করেছে।”

ভ্যাকুয়াম বোমা উচ্চ-তাপমাত্রার বিস্ফোরণ তৈরি করতে চারপাশের বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নেয়। এই বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে প্রচলিত বোমার তুলনায় শক্তিশালী শকওয়েভ তৈরি হয়। আর তা এতটাই প্রচণ্ড যে এটি মানবদেহকে বাষ্পে পরিণত করতে পারে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনে থার্মোবারিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে মস্কোর আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি।

তবে সিএনএন বলেছে, তাদের একটি দল শনিবার বিকেলে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে একটি রাশিয়ান থার্মোবারিক মাল্টিপল রকেট লঞ্চার দেখতে পেয়েছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন ​​সাকি বলেছেন, থার্মোবারিক অস্ত্র ব্যবহার করার খবর তিনি সংবাদমাধ্যমে দেখেছেন, তবে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি।

এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “যদি এটি সত্য হয়, তাহলে সেটা সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ হবে।”

সাকি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিষয়টি যাচাই করে দেখবে এবং প্রসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনও এ নিয়ে কথা বলবে

রয়টার্স লিখেছে, এ বিষয়ে তাদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি ওয়াশিংটনে রাশিয়ার দূতাবাস।

ইউক্রেনের দূত মার্কারোভা বলেছেন, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়তে তার দেশ আরও সামরিক সহযোগিতা চায়। সেই সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য বাইডেন প্রশাসন এবং কংগ্রেসের সাথে তারা আলোচনা করছেন।

মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের (রাশিয়া) চড়া মূল্য দিতে হবে।”

বৈঠকে অংশ নেওয়া ডেমোক্রেটিক দলের প্রতিনিধি ব্র্যাড শেরম্যান বলেছেন, ইউক্রেইন জুড়ে মার্কিন নো-ফ্লাই জোন চেয়েছিল ইউক্রেইনীয়রা, তবে এটি খুবই বিপজ্জনক; কারণ তা রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতকে উসকে দিতে পারে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, নির্বিচারে ক্লাস্টার বোমার মত অস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচারে এমন হামলা একটি ‘যুদ্ধাপরাধ’।

সোমবার বেলারুশ সীমান্তে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের শান্তি আলোচনা শুরুর মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেইনের দুটি ছোট শহর এবং একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকা দখল করে নেয় রাশিয়া। তবে অন্যান্য জায়গায় তারা প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট সোমবার বলেছেন, বৃহস্পতিবার আগ্রাসনের শুরু থেকে ইউক্রেইনে এ পর্যন্ত ১০২ জন বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর খবর তারা পেয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩০৪ জন।

তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।