সর্বশেষঃ

করমচা অসাধারণ একটি টক মিষ্টি ফলঃ

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে। লেবুর পাতায় করমচা, ঝড়-বৃষ্টি ঝরে যা। ছোটবেলায় এই ছড়া আমরা অনেকেই পড়েছি। কিন্তু এখনো অনেকেই হয়ত টক স্বাদের সেই করমচা ফলটাই দেখিনি। এটি আমাদের দেশের একটি গ্রাম্য ফল।

কাঁটায় ভরা করমচা গাছটি গ্রাম থেকে এখন শহরেও চাষ হয়। অনেকেই শখের বশে বাড়ির ছাদে, বাগানে বা টবে লাগাচ্ছেন করমচা গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্যারিসা ক্যারোন্ডাম’। ইংরেজিতে একে Bengal currant বা Christ’s thorn বলা হয়।

খেতে টক স্বাদের এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আর পাকলে জমাট বাধা রক্তের মতো লাল হয়ে যায়। কাটাযুক্ত গুল্মজাতীয় গাছের এ ফলটির রয়েছে বেশ পুষ্টিগুণ। করমচা গাছে ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল আসে, ফল ধরে এপ্রিল-মে মাসে। আর ফল পাকে বর্ষায়।
করমচা পুষ্টিগুণে যেমন সমৃদ্ধ। তেমনি আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
করমচায় রয়েছে শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন ‘সি’, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, কপার প্রভৃতি। অনেকের রক্তে কম পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, তারা নিয়মিত করমচা খেতে পারেন। অনেক রোগ প্রতিহত করতে কার্যকর করমচা। এর কিছু ঔষধি গুণও রয়েছে। ফলের পাশাপাশি গাছের অন্যান্য অংশও নানা গুণে ঠাসা।

পুষ্টিগুণঃ

প্রতি ১০০ গ্রাম করমচাতে রয়েছে- এনার্জি ৬২ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ১৪ গ্রাম, প্রোটিন ০.৫ গ্রাম, ভিটামিন এ ৪০ আইইউ, ভিটামিন সি ৩৮ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেভিন ০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৬০ মিলিগ্রাম, কপার ০.২ মিলিগ্রাম।

উপকারীতাঃ

* যকৃত ও কিডনীর রোগ প্রতিরোধে করমচা সহায়তা করে। এর পটাশিয়াম শরীরের দূষণ বহিষ্কারকরণে সহায়তা করে।
* করমচা রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
* শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ কমাতেও করমচা সাহায্য করে।
* করমচা ওজন কমাতেও সাহায্য করে। ভিটামিন সি-তে ভরপুর করমচা খাবারে রুচি বাড়ায়।
* মৌসুমী সর্দি-জ্বর নিরাময়ে সাহায্য করে। স্কাভি, দাঁত ও মাঢ়ির নানা রোগ প্রতিরোধে করমচা সাহায্য করে।
* করমচাতে কোনো ফ্যাট বা কোলেস্টেরল নেই। ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীদের জন্য এ ফল খুব উপকারী।
* বাতরোগ ও ব্যথাজনিত জ্বর নিরাময়ে করমচা খুব উপকারী।
* করমচাতে উপস্থিত ভিটামিন বি গায়ের চুলকানিসহ ত্বকের নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
* করমচা কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে। এছাড়া পেটের নানা অসুখ নিরাময়েও করমচা উপকারী।
* শরীরের ক্লান্তি ও বার বার হাই তোলা থেকে মুক্তি পাবার জন্য করমচার রস বেশ কাজে দেয়।
* করমচাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যা চোখের জন্য খুবই উপকারী।
* করমচার কার্বোহাইড্রেট কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
* করমচা ত্বক ভালো রাখে ও রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।

সতর্কতাঃ
করমচা শরীরের জন্য উপকারী হলেও, যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাদের করমচা না খাওয়াই ভালো। করমচা অনেক রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তবে ইদানিং বাজারে প্যাকেটে করে চেরি ফলের নামে কৃত্রিম রং দেয়া করমচা বিক্রি হয়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। তাই কেনার সময় সতর্ক থাকতে হবে।

Dr. Ujjal Kumar Nath
Professor
Department of Genetics and Plant Breeding
Bangladesh Agricultural University
Mymensigh

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *