সর্বশেষঃ

গাজরের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণঃ

গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু শীতকালীন সবজি, যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। গাজরের উপকারিতা ও পুষ্টিগুনে আধিক্যতার কারনে গাজরকে বলা হয় সুপার ফুড। কাচাঁ ও রান্না দুভাবেই খাওয়া যায় গাজর, তাই গাজরকে সবজি এবং ফল দুটাই বলা যায়। নানা প্রকার খাদ্য তৈরিতে গাজর ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে তরকারি, ভাঁজি, হালুয়া ও সালাদ হিসেবে গাজর অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে সর্বোচ্চ পুষ্টিগুনের লাভের জন্য কাচা গাজর খাওয়াই সর্বোত্তম। তাই কাঁচা গাজর অথবা গাজরের জুস বানিয়ে খেলেই গাজরের সর্বোচ্চ পুষ্টি উপাদান পাবেন। গাজরে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এটি স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও সৌন্দর্যচর্চায় বহুদিন থেকে সমাদৃত, তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উপকারটি হ’ল দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। গাজর এর ইংরেজি নাম Carrot এবং বৈজ্ঞানিক নাম Daucus Carota যা একপ্রকার মূল জাতীয় সবজি।

গাজরের পুষ্টিগুণঃ
গাজর নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে রয়েছে –খাদ্যশক্তি ৪১ কিলোক্যালরি, আমিষ ০.৯৩ গ্রাম, শর্করা ৯.৫৮ গ্রাম, ফাইবার ২.৮ গ্রাম, চর্বি ০.২৪ গ্রাম, ভিটামিন এ ১৬৭০৬ আইইউ, বিটা ক্যারোটিন ৮২৮৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ৫.৯ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩২০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩৫ মিলিগ্রাম, কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৩ মিলিগ্রাম ও জিংক ০.২৪ মিলিগ্রাম।

গাজরের উপকারিতাঃ

১। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ
গাজর চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে বিটা-ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গাজর এ প্রচুর পরিমাণ বিটা-ক্যারোটিন নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এই উপাদানটি শরীরে ভিটামিন ‘এ’-তে পরিণত হয়। তাই গাজরে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, চোখের কোষকলা তৈরীতে সাহায্য করে রাতকানা, গ্লুকোমা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করে।

২। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
গাজরের মধ্যে যে ক্যারটিনয়েড থাকে তা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বিষমুক্ত করে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। গাজরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খনিজ যেমন, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি থাকে যা হাড় গঠন, নার্ভাস সিস্টেমকে শক্ত করা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৩। ওজন কমায়ঃ
পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের পরিমাণ খুবই কম থাকে। এটি খেলে পেট ভরা থাকে বলে ক্যালরিবহুল অন্য খাবার খেতে হয়না। এ ছাড়া গাজর চর্বি কমাতে সাহায্য করে বলে ওজন কমে। তাই ওজন কমাতে বেশি বেশি গাজর খান।

৪। ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ
গাজর এ প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরে থেকে ফ্রি র‌্যাডিকেলস দূর করে। ফ্রি র‌্যাডিকেলস হল শরীরের উচ্ছিষ্টাংশ যা শরীরের উপকারী কোষ নষ্ট করে এবং ক্যান্সার সহ আরও অনেক জটিল রোগ সৃষ্টি করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে গাজরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলো ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত গাজর খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলোন ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

৫। অ্যান্টি অ্যাজিং ও ত্বকের সুস্থতা রক্ষা করেঃ
গাজরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে। তাই এটা তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম একটি খাবার। ত্বকের ক্ষেত্রে গাজরের অন্যান্য উপকারিতার মাঝে বলিরেখা প্রতিরোধ করা অন্যতম। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজের উপস্থিতি ত্বক শুকিয়ে যাওয়া, স্কিন টোনকে উন্নত করা এবং ত্বকে দাগ পড়া থেকে রক্ষা করে।

৬। হৃদরোগ প্রতিরোধ করেঃ
গাজরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিএসিটিলিন ও ডায়েটরি ফাইবার হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। এই উপাদানগুলো ধমনির ওপর কোন কিছুর আস্তর জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং হার্টকে সুস্থ রাখে। গাজরের উচ্চমান সম্পন্ন ক্যারোটিনয়েডস হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত গ্রহণে গাজরের বিটা ও আলফা ক্যারোটিন রক্তনালী সংকোচন, অ্যাসিডিটির প্রকোপ কমায়।

৭। কোলেস্টরেল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করেঃ
গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের উপাদান খুবই কম। গাজরে থাকা পটাশিয়াম কোলেস্টরেল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাজর চর্বি কমাতে সাহায্য করে বলে ওজনও কমে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যে সব ভিটামিন এবং খনিজের প্রয়োজন তাও বিদ্যমান।

৮। এছাড়াও গাজরে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বককে ব্রণ থেকে রক্ষা করে, চুল পড়া রোধ করে, চুলকে শক্ত, মজবুত ও ঝলমলে করে। নিয়মিত গাজরের জুস খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। তাই, প্রতিদিন একটি করে গাঁজর হতে পারে আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও সৌন্দর্যচর্চার অংশ।

☆ সতর্কতাঃ

যাঁরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের জন্য গাজরের জুস পান করার সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এতে যকৃতে বিষাক্ত উপাদান তৈরি হতে পারে। তাই সকাল ও রাতে খাওয়ার পর এবং ওষুধ সেবনের দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর গাজর খাওয়া ভালো।

ড. উজ্জল কুমার নাথ
প্রফেসর
কৌলীতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহ