সর্বশেষঃ

চরম অভাবে ক্রিকেটাররা, ধার চাইলেন বিসিবির কাছে

চরম অভাবে ক্রিকেটাররা, ধার চাইলেন বিসিবির কাছে
ঈদের পর শুরু হবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ; আশা ছিলো এমনটাই। কিন্তু, বিসিবি সভাপতি সাফ বলে দিয়েছেন, আপাতত ঘরোয়া ক্রিকেট ফেরানোর কোনো চিন্তাভাবনা নেই তাদের। লিগ শুরুর আগেই চুক্তির ৫০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করার নিয়ম থাকলেও, সেটি মানেনি বেশিরভাগ ক্লাবই। ফলে চরম অর্থ সংকটে ভুগছেন ঘরোয়া ক্রিকেটাররা। তাই উপায় না পেয়ে, বোর্ডের শরণাপন্ন হচ্ছেন খেলোয়াড়রা। অর্থাভাব পূরণে বিসিবির কাছ থেকে প্রয়োজনে টাকা ধার নিতেও প্রস্তুত ঘরোয়া ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলের শ্রীলঙ্কা সফরের পর আবারও লিগ শুরুর দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঘরোয়া ক্রিকেটের রেকর্ড রান সংগ্রাহক তুষার ইমরান বলেন, সিসিডিএমের কিন্তু একটা নির্দেশনা ছিল যে প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগেই খেলোয়াড়দেরকে ৫০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে হবে। ডিপিএলের ১২টা দলের মধ্যে ১১টা দল ২০ থেকে ৩০ ভাগ টাকা পরিশোধ করেছে। তবে একটা দল কিন্তু কোন টাকাই দেয়নি ক্রিকেটারদেরকে। সেটা হচ্ছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। যেহেতু বিসিবি বলেছে প্লেয়ারদেরকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। সেহেতু আমাদের দাবি থাকবে ক্রিকেট বোর্ডের কাছে, সিসিডিএমের যে নির্দেশনা ছিল ৫০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে হবে, সেই টাকাটা যেন বিসিবি আমাদেরকে দেয় আপাতত লোন হিসেবে। পরবর্তীতে ক্লাব আমাদেরকে টাকাটা দিলে আমরা সেটা বিসিবিকে পরিশোধ করে দিবো।
তুষার ইমরানের মতো ঘরোয়া ক্রিকেটের সামনের সারির খেলোয়াড়দের যখন করুণ দশা তখন অন্যদের অবস্থা কি হতে পারে বুঝতে বাকি থাকে না।

করোনার আঘাতে মার্চে প্রথম রাউন্ডের পর থেকেই বন্ধ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। ঈদ-উল-আজহার পর বাকি অংশের খেলা কিছুটা হলেও মাঠে গড়াবে, প্রতীক্ষায় ছিলেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু, বিসিবি সভাপতির কথায় পরিষ্কার, সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
গতকাল শনিবার (১৩ আগস্ট) গণমাধ্যমে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, দুই পরিস্থিতিতে দেশে ক্রিকেট শুরু হতে পারে। এক, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে হবে। অথবা ভ্যাকসিন আসতে হবে। নতুবা খেলা শুরু করার মতো কোন কারণ আমি দেখি না। পরিস্থিতি ইম্প্রুভ করলে অবশ্যই খেলা শুরু করে দিবো আমরা। এখন তো ইংল্যান্ড ছাড়া আর কোথাও খেলা হচ্ছে না। সুতরাং শুধু শুধু সাহস দেখানোর কোন মানে হয় না।
তার এই ঘোষণার পর আবারো ঘরোয়া ক্রিকেটাররা পড়েছেন চরম বিপাকে। ১২০ জন ক্রিকেটারকে বিসিবি মাসিক ৩০ হাজার টাকা করে সহায়তা দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু, ডিপিএলের ১২ ক্লাবের একটা বড় অংশের আয়ের পথই যে বন্ধ। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির বাস্তবতা মানলেও, নিরুপায় হয়েই লিগ শুরুর বিষয়টি বিবেচনা করতে বোর্ডকে অনুরোধ করেছেন তারা।
তুষার ইমরান বলেন, ধীরে ধীরে সবগুলো দেশই ঘরোয়া ক্রিকেট ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এখন ক্লাবগুলো কিন্তু রাজি হবে না ডিপিএল খেলতে কারণ বাংলাদেশ টিমের অনেকে এখন খেলতে পারবে না। কারণ সামনে জাতীয় দলের শ্রীলঙ্কা সফর আছে। তবে সফর শেষে আবারো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেলা শুরু করা যেতে পারে। আমাদেরও দাবি থাকবে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে যেন আবারো ক্রিকেট মাঠে গড়ায়। সেটি হলে আমাদের জন্য খুব ভালো হয়।
আরেক তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে কেন্দ্র করে ক্রিকেটাররা সারা বছরের প্ল্যান করে থাকে। সেটি বন্ধ হয়ে গেলে সবাই বিপদে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক।
ক্রিকেটারদের চুক্তির অর্থ বুঝিয়ে না দেয়া নিয়ে ডিপিএল ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে প্রতি মৌসুমে। এবারও লিগ শুরুর আগে অর্ধেক টাকা পরিশোধের নিয়ম মানেনি বেশিরভাগ ক্লাব। তবে শেখ জামালের পরিচালক ইকবাল খোকন বললেন, তার ক্লাব খেলোয়াড়দের পাশে আছে।
তিনি বলেন, আমরা সিসিডিএম এর নির্দেশনা অনুযায়ী ক্রিকেটারদের ৫০ শতাংশ টাকা খেলা শুরুর আগেই দিয়ে দিয়েছি। আমরা সবসময়ই তাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো।
ক্লাব কর্তৃপক্ষের এমন আশ্বাস নতুন নয়। কিন্তু, বাস্তবে জীবিকার জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটের ওপর নির্ভরশীল খেলোয়াড়দের দুর্ভোগ কমে না।
জাতীয় দল কিংবা আশপাশে থাকা ক্রিকেটারদের অর্থের অভাব নেই। কিন্তু যারা বছরের পর বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন তাদের আয়ের উৎস কেবল ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোই। আর সেসব আসর না চললে কিংবা আসর খেলে যে টাকা পাওয়ার কথা সেটি না পেলে কি করে জীবিকা নির্বাহ করবেন তারা, সেই প্রশ্নটা রেখেছেন ক্রিকেটাররাই।

গ্লোবাল টাইম২৪.কম।