সর্বশেষঃ

চরম সংকটের পথে বাংলাদেশ: গার্ডিয়ান

গত কয়েক দশকের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী মৌসুমী বন্যার কবলে পড়া বাংলাদেশ চরম মানবিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলেও পূর্বাভাস রয়েছে। এর মধ্যেই জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালের পর এবারের বন্যাই সবচেয়ে দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুপার সাইক্লোন আম্পানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার পাশাপাশি বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরের বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি ভালো থাকা সত্বেও বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসী মানুষ।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে ওঠে আসে, বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপালে ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট অব্যাহত বন্যায় এ পর্যন্ত বহু মানুষ আশ্রয়হীন হয়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কোস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, অতীতের চেয়ে এবারে বাংলাদেশের বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতিও ভালো ছিল। তারপরও এমন পরিস্থিতির জন্য তিনি বিদ্যমান স্থানীয় ও জাতীয় সংকটের সমন্বয়কে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ইতোমধ্যে মানুষের আয় কমে গেছে। এসব পাটকলের অধিকাংশই বন্যা কবলিত উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বলে জানান তিনি।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘লকডাউনের কারণে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। গ্রামীণ অঞ্চলের আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশই আসতো শহর এলাকা থেকে। আর সেই অবস্থাতে হঠাৎ করেই শ্রমিক ও রিকশাওয়ালারা বাড়িতে টাকা পাঠানো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।’ প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি ক্রয়ের ওপর এর প্রভাব রয়েছে, এই জটিল পরিস্থিতি আমাদের পার করতে হবে বলে জানান রেজাউল করিম।’

কোস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক গার্ডিয়ানকে আরও জানান, মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে স্থানীয় সংস্থাগুলোর তহবিলে টান পড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সেইসব কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে যাদের ফসল আগস্টে ঘরে তোলার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘ বলছে, আগাম তথ্য ও পূর্ভাবাস বিশ্লেষণ করে তারা জীবিকার ক্ষয়ক্ষতি প্রাক্কালে চেষ্টা করছে। যাতে করে সময়ের আগেই কোথায় সহায়তা দরকার তা নির্ধারণ করা যায়। এই প্রাক্কলনের ভিত্তিতেই জাতিসংঘের রিজার্ভ তহবিল থেকে ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে ৫২ লাখ ডলারের ত্রাণ ছাড় করা হয়েছে। নগদ অর্থ, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম এবং পানির ক্ষয়ক্ষতি থেকে কৃষকের উপকরণ রক্ষার সরঞ্জামের আকারে এসব ত্রাণের দেয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্ক লোকক বলেছেন, দুর্যোগ আঘাত হানার পর সংস্থাটির আর অবাক হওয়ার কিছু নেই। ‘সংকট আঘাত হানার আগেই কিছু করা গেলে আরও বেশি জীবন রক্ষা করা যায় এবং অর্থের ক্ষতিও কম হয়। আমাদের সহায়তা দেয়া মানুষের বেশি কাজে আসে।’ লোককের মতে, ‘যদি জানতে পারি বন্যা আঘাত হানতে যাচ্ছে, তাহলে আমরা কেন দুর্যোগ আসার আগেই নদী তীরবর্তী জনগোষ্ঠীর প্রাণী সম্পদ ও সরঞ্জাম রক্ষার মতো অর্থপূর্ণ সহায়তা দেবো না। এর বদলে কেন আমরা তাদের সবকিছু হারানোর অপেক্ষা করবো, আর তারপরে চেষ্টা এবং সহায়তা দেবো?’
চলমনা সঙ্কট নিয়ে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি’র) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি বলেছেন, পূর্বাভাসের ভিত্তিতে কর্ম পরিকল্পনায় আরও জোর দিতে পারলে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা পারে। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে। পানি কেবল মানুষের বাড়ি এবং জীবন ভাসিয়ে নিয়ে যায় না এর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি ও আশাও ভাসিয়ে নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘এই ধরণের দুর্যোগ থেকে তাদের রক্ষা এবং প্রস্তুত করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর সরঞ্জাম সক্ষমতা বাড়ানো কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমি যথেষ্ট জোর দিয়ে প্রকাশ করতে সক্ষম নই।’
এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের বিশ্বাস, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কৌশলগতভাবেই এগুতে হয়। এ বিষয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নকেই মুখ্য বলে প্রতিবেদনে ওঠে আসে।
– গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন লূৎফর কবির।