সর্বশেষঃ

জবানবন্দি প্রত্যাহারের আর্জি নিয়ে আপিল বিভাগের রায় প্রকাশ

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে বলেছেন, ‘কোনো আসামির ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও সত্য হলে ৩৪২-এর সময় নির্দোষ দাবি করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের এ আবেদন আইনের দৃষ্টিতে মূল্যহীন।’

সকিনা বেগম ও সোহেল হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে গত বছরের ২১ অক্টোবর দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

আপিল বিভাগের ২৬ পৃষ্ঠার এ রায় সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। মূল রায়টি লিখেছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। প্রধান বিচারপতিসহ বেঞ্চের অন্য তিন বিচারপতি এতে সমর্থন দিয়েছেন।

১৬ বছর আগে ২০০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কামরাঙ্গীরচর থানায় করা সকিনা বেগম ও সোহেল হত্যা মামলায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়, ‘এটা প্রতিষ্ঠিত নীতি যে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও সত্য হলে সাজা দেয়ার জন্য অন্য কোনো সমর্থক সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রয়োজন নেই। এই মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষী নেই। এখানে সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র ভিত্তি হলো আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।’

‌‘এ মামলায় দুই আসামি যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও সত্য। এ কারণে হাইকোর্ট সঠিকভাবেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে।’

আদালত আরও বলেন, ‘এই মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানকারী আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় বক্তব্য দেয়ার সময় নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেছে।’

তারা বলেছেন যে, ‘পুলিশ ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। তারা নির্দোষ।’

আদালত বলেন, ‘কিন্তু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার সময় তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ করেননি।’

‘সুতরাং তাদের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও সত্য বলেই প্রতীয়মান হয়। তাই ৩৪২-এর সময় নির্দোষ দাবি করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের এ আবেদন আইনের দৃষ্টিতে মূল্যহীন।’

মামলার নথি থেকে জানা যায়, সখিনা বেগম নামে এক নারী ও তার ছেলে সোহেলকে হত্যার অভিযোগে শেফালী বেগম ২০০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি থানায় আফসার আলী শেখসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন।

এ মামলায় পুলিশ মো. আফসার আলী শেখকে গ্রেফতার করে। আফসার আলী শেখের তথ্যের ভিত্তিতে মো. আব্দুল মান্নান, নুর আলম, মো. আবুল হোসেন ও মাইকেল ফারুককে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে আফসার ও মান্নান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পুলিশ তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৯ এপ্রিল ৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এ মামলায় বিচার শেষে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ আসামিকেই মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে রায় দেন।

এরপর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। আর কারাবন্দী আসামিরা আপিল করেন। উভয় আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া আফসার শেখ ও আব্দুল মান্নানের মৃত্যুদণ্ড বহাল আর অন্য তিন আসামিকে খালাস দিয়ে ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর রায় দেন।

এ রায়ের পর আফসার শেখ ও আব্দুল মান্নান আপিল বিভাগে ২০১২ সালে আপিল করেন। তাদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে দুই আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

রায়ে বলা হয়, ‘যেহেতু আসামিরা কনডেম সেলে ১৪ বছর ধরে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করছে। তাই তাদের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো।’