সর্বশেষঃ

দেশজ ফল চালতা পুষ্টিগুণে ঠাসাঃ

চালতা মূলত মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ। এর শাখাপ্রশাখা এলোমেলো, শীর্ষ প্রায় গোলাকৃতি, ছায়াঘন এবং ছড়ানো। বাকল লালচে মৃসণ। পাতা দীর্ঘাকৃতির, দৃঢ়-শিরাবিন্যাসে এবং প্রায় খাঁজকাটা প্রান্ত করাতের দাঁতের মতো ধারালো। পাতার আকৃতি এবং বিন্যাসেও চালতা গাছ রূপসী। বর্ষায় ফোটা এ ফুলের বৃতির রঙ সবুজ, মাংসল ও স্থায়ী। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে এ বৃতিই ফলে রূপান্তরিত হয়।

চালতার দাম কম ও সহজলভ্য হওয়ায় কম-বেশি সকলেই এটি পছন্দ করে। চালতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরী করা হয় যা সবারই কম-বেশি পছন্দ। আবার এই ফলে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। চালতায় আছে ক্যালসিয়াম, শর্করা, আমিষের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান। এ ছাড়াও আছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, থায়ামিন ও রিবোফ্লাবিন। তাই চালতা শরীরে যেমন রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে, তেমনি পুষ্টি পূরণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

টক ফল চালতার আচার, চাটনি, টক ডাল অনেকেরই প্রিয় খাদ্য। পাকা ফল পিষে নিয়ে লবণ-মরিচ দিয়ে মাখালে তা বেশ লোভনীয় হয়। চালতা ফলের যে অংশ খাওয়া হয় তা আসলে ফুলের বৃতি। প্রকৃত ফল বৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে।এ ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, শর্করা, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন ও আমিষের মতো নানা ধরণের স্বাস্থ্য উপকারী উপাদান।
টক ফল চালতার আচার, চাটনি, টক ডাল অনেকেরই প্রিয় খাদ্য। পাকা ফল পিষে নিয়ে লবণ-মরিচ দিয়ে মাখালে তা বেশ লোভনীয় হয়। গ্রাম এলাকায় সাধারণত জঙ্গলে এ গাছ জন্মে। কখনো কখনো দুয়েকটি গাছ বাড়ির উঠানে দেখা যায়। চালতা ফলের যে অংশ খাওয়া হয় তা আসলে ফুলের বৃতি। প্রকৃত ফল বৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে।

চালতার পুষ্টিগুণঃ

☆ চালতায় প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকে। এ কারণে এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। চালতায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে। যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে দারুন উপকারী। বিশেষজ্ঞরা জানান, অনেক কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। তবে তা পূরণ করতে সাহায্য করে ভিটামিন এ সম্বলিত খাবার। তাই চোখের সুরক্ষায় চালতা খেতে পারেন।

☆ ত্বক টানটান কিংবা বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে ভিটামিন সি খুব জরুরি। সেক্ষেত্রে চালতা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ চালতায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়| চালতায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি-ও থাকে। দুর্বলতা দূর করতে এবং শরীরের শক্তি জোগাতে এটি দারুন উপকারী। এটি মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর শক্তি বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

☆ শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে চালতা। এটি আয়রনেরও ভালো উৎস। যারা আয়রনের অভাবে রক্তশূণ্যতায় ভূগছেন তাদের জন্য এই ফলটি দারুন উপকারী।

☆ রক্তচাপ কমাতেঃ
আপনি যদি আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে চান তাহলে অবশ্যই পটাসিয়াম যুক্ত খাবার খান। প্রচুর খাদ্য রয়েছে যেগুলি দেহে পটাশিয়াম সরবরাহ করে। চালতা তাদের মধ্যে অন্যতম। এটি রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।

☆ ঠাণ্ডা ও কাশি কমাতে চালতার উপকারিতাঃ
চালতা ভালো পরিমাণে ভিটামিন সি ধারন করে। আর আমরা সবাই জেনে থাকি আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম প্রতিরক্ষা করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনি যদি ঠাণ্ডা ও কাশির মতো ইনফেকশনে ভুগে থাকেন তাহলে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। আর ভিটামিন সি আপনি পেয়ে যাবেন চালতা থেকে।

☆ হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেঃ
আমরা অনেকেই জেনে থাকি না কাঁচা চালতা আমাদের হজম শক্তির জন্য কতটা উপকার। কাঁচা চালতা আমাদের হজমশক্তি বাড়িয়ে তোলে। তাই আপনার যদি হজমে সমস্যা থাকে কাঁচা চালতা খেলে উপকৃত হবেন।

☆ চোখ ভালো রাখেঃ
চালতা ভিটামিন এ ভালো উৎস বলে মানা হয়। যা আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি জানেন বিশেষজ্ঞরা চোখের দৃষ্টি শক্তি হারানোর জন্য ভিটামিন এ এর অভাবকে দায়ী করে থাকে। কারণ ভিটামিন এ এর অভাবেই আমাদের চোখের ভিন্ন ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে। আর এই সমস্যাগুলি ভিটামিন এ এর দ্বারা নিরাময় করা যায়। আর ভিটামিন এ গুণ চালতার মধ্যে বিদ্যমান। তাই চোখ ভালো রাখতে চালতা খাওয়া উপকারি।

☆ বয়সের ছাপ পড়তে বাঁধা দেয়ঃ
আমরা আগেও জেনেছি চালতা আমাদের ত্বকের জন্য উপকারি উপাদান। আর এই ভিটামিন সি আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে বাঁধা দেয়। ভিটামিন সি অভাবেই অল্প বয়সীদের বয়সের ছাপ পড়ে। তাই বয়সের ছাপ দূর করতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া দরকার আর যা আপনার নিয়মিত চালতার মাধ্যমে পেতে পারেন।

☆ পেটের কৃমি কমায়ঃ
আপনারা হয়তো জানলে অবাক হবেন চালতায় কৃমি কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। তাই বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য চালতা খুব উপকারি। নিয়মিত চালতা খেলে পেটের কৃমির সমস্যা অনেকটাই রোধ করা যায়।

☆ ডায়রিয়া কমাতেঃ
ডায়রিয়া ভালো করতে চামড়া উপকারিতা অনেক। তাই যাদের ডায়রিয়ার সমস্যা তাদের সুস্থ হতে নিয়মিত চালতা খাওয়া উচিত।

১. চালতা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’-এর ভালো উৎস।

২. প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এই ফল স্কার্ভি ও লিভারের রোগ-প্রতিরোধ করে।

৩. চালতায় রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

৪. চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৫. চালতায় থাকা আয়রন রক্তের লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সহায়তা করে। রক্তের সংবহন ঠিক রাখে।

৬. চালতার বিভিন্ন উপাদান হার্টের নানা রোগ-প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

৭. চালতা পেটের নানা অসুখ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডায়রিয়া সারাতে কাঁচা চালতার রস বেশ উপকারী।

৮. রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে চালতা।

৯. ঠান্ডা ও কাশির জন্য পাকা চালতার রস চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

১০. কিডনির নানা রোগ-প্রতিরোধেও সহায়তা করে চালতা।

ড. উজ্জল কুমার নাথ
প্রফেসর
কালীতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *