সর্বশেষঃ

দেশের অন্তত: ৩০ শতাংশ মানুষ ভুগছে থাইরয়েডে

স্টাফ রিপোর্টার॥ ভ্রুণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থাইরয়েড হরমোনের প্রয়োজনীতা অপরিহার্য। এ হরমোনের তারতম্যের কারণে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হওয়া, নারীদের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। শুধু তাই নয় এর তারতম্যের কারণে হার্টের সমস্যার পাশাপাশি চোখ ভয়ঙ্করভাবে বড় হয়ে যেতে পারে। বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ এই থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য। আর দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত: ৩০ শতাংশ লোক এই থাইরয়েডের হরমোনজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। আর তাই এটিকে মোকাবিলায় সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

বুধবার রাজধানীর একটি বিশ্ব থাইরয়েড দিবস (বিইএস) উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, শারীরিক কার্যক্ষমতা সঠিক রাখার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় এ হরমোন শরীরে থাকা একান্ত জরুরি। বর্তমানে বিপুল জনগোষ্ঠী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। এদের অর্ধেকের বেশিই জানে না যে তারা থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছে। এসময় এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় ০.২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা) রোগে ভোগে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থাও অনেকটা এমনই উল্লেখ করে তারা বলেন, ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতি জনিত সমস্যা হতে পারে। বাড়ন্ত শিশুরাও থাইরয়েড হরমোন ঘাটতিতে ভুগতে পারে। এ সময় থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতি হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে দৈহিক বৃদ্ধির সমতা আনয়ন করা গেলেও মেধার উন্নতি করা সম্ভব হয় না। উল্লেখ করে তিনি বলেন, থাইরয়েডজনিত রোগ মোকাবিলায় সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই বারডেম হাসপাতাল, থাইরয়েড মোকাবিলায় এই দুই প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য মেডিক্যাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি দিবসের উদ্দেশ্য হলো জনগণকে সচেতন করা। আজ বিশ্ব থাইরয়েড দিবসের উদ্দেশ্যও তাই। ভয়াবহ এই রোগ থেকে বাঁচতে সবাইকেই আরও সচেতন হতে হবে।

অনুষ্ঠানে গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড চিকিৎসার গাইডলাইন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিইএস প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান, বিএসএমএমইউ’র এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এমএ হাসানাত, গাইনোকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেগম নাসরিন প্রমুখ।

একই দিন সকালে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস-২০২২ উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা বের করে বাংলাদেশ এন্ড্রোক্রাইন সোসাইটি ও বাংলাদেশ থাইরয়েড সোসাইটি।

জানা যায়, অবসাদ, বিষন্নতা, ভুলে যাওয়ার রোগের নাম ‘থাইরয়েড’। বিশ্বব্যাপী ৭৫ কোটি মানুষ থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন গত কয়েক বছর ধরে দিবসটি যথাযথভাবে পালন করে থাকে। দিবসটির এবারের মূল বার্তা হলো- থাইরয়েড এবং যোগাযোগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থাইরয়েড প্রজাপতির ডানার মতো শরীরের একটি গ্রন্থি। যা গলার স্বরযন্ত্রের দুই পাশে থাকে। এ গ্রন্থির রং বাদামি। ঘাড়ের কাছে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসারিত হরমোন শরীরের মেটাবোলিজমকে নিয়ন্ত্রণ ও শরীরের প্রতিটি কোষকে প্রভাবিত করে। এই হরমোন শরীরের শক্তি, পুষ্টি ও অক্সিজেন উৎপাদন করতে সহায়তা করে। এর ব্যতিক্রম হলেই শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

থাইরয়েড সমস্যা হলে হৃদস্পন্দন হ্রাস পায়, ঠান্ডায় স্পর্শকাতরতা বাড়ে, হাতে অবশ অবশ অনুভূত হয়ে ঘাড়ের পরিবর্ধন শুরু হয়। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য, মেয়েদের মাসিকে প্রচুর রক্তপাত হয় এবং চুল ও ত্বকে শুষ্কতা দেখা দেয়। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে সমস্যা হলে মৃদু থেকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, ঘাড় নড়াচড়া করলে অথবা কোনো কিছু গিলে খেতে গেলে অস্বস্তি অথবা ব্যথা হয়ে থাকে। সর্দি, হাম অথবা মাম্পসের মতো ভাইরাসজনিত রোগের সময় এ রোগটি দৃশ্যমান হয় বেশি।