সর্বশেষঃ

নতুন রাজনৈতিক দল ‘বিএসপি’র আত্মপ্রকাশ

অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার’ জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন।

সনাতন সম্প্রদায়ের ‘অস্তিত্ব রক্ষা এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে’ বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি) নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে দলটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা করে। অনুষ্ঠানে দলটিকে স্বাগত জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

আলোচনা সভা শেষে ব্যবসায়ী সুশান্ত চন্দ্র বর্মনকে বিএসপির সভাপতি এবং আইনজীবী সুমন কুমার রায়কে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়।

স্বাগত বক্তৃতায় বিএসপি সদস্য সন্তোষ মাহাতো বলেন, “বর্তমান সরকার সনাতন সম্প্রদায়ের সুরক্ষা প্রদান করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। সনাতন সম্প্রদায় রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

“মহান জাতীয় সাংসদে সনাতন সম্প্রদায়ের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব না থাকায় এ সম্প্রদায়ের উপর প্রতিনিয়ত নানাবিধ অত্যাচার-নির্যাতনের কোনো বিচার হচ্ছে না।”

বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি) আগামী দিনে সনাতন সম্প্রদায়ের ‘অস্তিত্ব’ রক্ষায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।

বিএসপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায় বলেন, “আগামী দিনে বাংলাদেশের সনাতন সম্প্রদায় কোনো রাজনৈতিক দলের ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।

“আগামী দিনে যে রাজনৈতিক দল সনাতন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষা ও সনাতনী রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে, সনাতন সম্প্রদায়ও তাদের পাশে থাকবে।”

২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সব নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বিএসপি আহ্বায়ক সুশান্ত চন্দ্র বর্মন বলেন, “ভবিষ্যতে যাতে রামু, নড়াইলের মতো জঘন্য ঘটনা না ঘটে, সেই বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।”

গ্রামেগঞ্জে হিন্দুরা ‘নির্যাতিত হচ্ছে’

সভায় অতিথি হয়ে আসা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি কাজ করেছে সূক্ষ্মভাবে, সেটা হল- আপনাদের মধ্যে যারা প্রতিপত্তিশালী, শিক্ষিত, উপরের দিকে আছেন, তাদেরকে বিভিন্নভাবে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে হিন্দুদের সুরক্ষায় রাখার মত করে একটা আচরণ করেছে।

“যাদেরকে একটু সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে তারা দিন-রাত এরশাদ সাহেব, জাতীয় পার্টিকে গালাগালি এবং আওয়ামী লীগকে সুখ্যাতি করে যাচ্ছে। কিন্তু যারা সাধারণ, যারা গ্রামেগঞ্জে বসবাস করছেন তারা সেখানে নিরাপত্তার সাথে বসবাস করতে পারছেন না, এটাই হল বাস্তবতা।”

সংখ্যালঘুরা ‘বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন’ মন্তব্য করে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কাদের বলেন, “তাদের জমিজমা নিয়ে যাওয়া হয়, গরু-ছাগল নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যায়ভাবে তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়। শেষ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি করা হয়- তখন তারা এদেশে নিরাপদ বোধ করেন না, এটা দুঃখের বিষয়। সবসময় আমরা এর প্রতিবাদ করে এসেছি।”

‘কারণে-অকারণে’ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ করেন সংসদের বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের।

“কেউ না কেউ ফেইসবুকে কিছু ছেড়ে দিয়ে হিন্দুদের নাম দিয়ে তাদের বাড়িঘর দখল করার চেষ্টা করে। এসব ঘটনার কোনো শাস্তি হয় না। শাস্তি হয় না, কারণ হল- এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, যতগুলো রিসেন্ট ঘটনা আমাদের সামনে এসেছে, সবগুলোই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।”

নতুন রাজনৈতিক দল ‘বিএসপি’র আত্মপ্রকাশ
সম্পত্তি গ্রাস করতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘টার্গেট’ করে অত্যাচার করা হয় অভিযোগ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে আমি যা দেখেছি- হিন্দু সনাতন মানুষের ওপর যে অত্যাচার হয় সেটা হয় যারা দরিদ্র, নিরীহ, যারা গ্রামেগঞ্জে দূরে থাকে, প্রশাসন থেকে যাদের বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া যায় না; সেসব এলাকায় যারা প্রতিপত্তিশালী, তারা যে কোনোভাবেই মানুষের সম্পত্তি গ্রাস করে, অসহায় মানুষদের ওপর অত্যাচার করে। তাদের একটা টার্গেট থাকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।”

নতুন দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জি এম কাদের বলেন, “আপনারা একটি সংগঠন করার উদ্যোগ নিয়েছেন এইজন্য আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। একতাই বল, সবাই যখন একসাথে কাজ করবেন, আপনাদের মধ্যে যারা উচ্চ পর্যায়ে আছেন, তারা যদি আপনাদের সঙ্গে থাকে, আপনারা সকলে মিলে একটি শক্তিশালী সংগঠন হবে।

“তখন এই শক্তি নিয়ে আপনরা অশুভ শক্তিকে দমন করতে পারবেন। অশুভ শক্তি দমন করে আপনাদের যে চাওয়া-পাওয়া, অধিকার তা সংরক্ষণ করতে পারবেন। আমরা আপনাদের পাশে থাকব।”

সব সেক্টর ‘দুর্নীতির আখড়া’

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে জি এম কাদের বলেন, “সরকার তো আল্লাহর রহমতে চলছে, কেউ চালাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি কেউ চালাচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আল্লাহর ওয়াস্তে সরকার চলছে।”

সরকারি অফিস বন্ধ করে বিদ্যুতের সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত ‘হাস্যকর’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকারি অফিস যদি বিদ্যুতের কারণে মনে করেন সাত দিনই বন্ধ রাখেন, তখন অন্তত ঘুষের সমস্যা হতে মানুষ একটু মুক্তি হতে পারবে। মানুষ যাওয়া-আসার কষ্ট, ঘুষ দেওয়ার কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারবে।

“দুর্নীতি হচ্ছে ব্যাপকহারে সমস্ত সেক্টরে। তার মধ্যে বিদ্যুতের কথা আসছে, বিদ্যুৎ চলে যায় মাঝে মাঝে। জ্বালানির কথা আসছে, জ্বালানি তেলের যে দাম তার চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এই দুই সেক্টর দুর্নীতির আখড়া। সব সেক্টরই দুর্নীতির আখড়া হয়েছে। ওই দুটি এত বড় গোপন আখড়া যে, সাধারণ মানুষ জানে না।”

জ্বালানি খাতে দীর্ঘদিন চাকরি করায় সেখানকার পরিচিতদের কাছ থেকে দুর্নীতির তথ্য পেয়ে থাকেন মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, “অয়েল সেক্টরে দীর্ঘদিন আমার অভিজ্ঞতা আছে… অনেক খবর-টবর পাই। জ্বালানি খাতে ব্যাপকহারে দুর্নীতি হচ্ছে। যে দাম বাড়ানো হয়েছে, সেখানে ট্যাক্স একটু কমানো সম্ভব ছিল। এরশাদ সাহেব জ্বালানির ওপর ট্যাক্স নিতেন না।”

‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, আওয়ামী লীগ সমর্থন করে’

সংবিধানে যে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলা আছে, তা কোনোভাবেই লঙ্ঘন করা হয়নি বলে দাবি করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

“রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম, তাতে যেখানে বৈষম্যের কথা বলা হচ্ছে- ‘অন্য সকল ধর্মের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হবে’- এটা বলে কিন্তু বৈষম্যের অবসান করা হয়েছে। ধর্ম নিরপেক্ষতাকে লঙ্ঘন করা হয়নি।”

সরকারের সমালোচনা করে জি এম কাদের বলেন, “সংখ্যালঘুদের ওপর অন্যায় করা হলে বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর, তখন সবকিছুর দোষ সংবিধানের ওপর চাপিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের এরা নিজেকে একটু দূরে থাকতে চায়। একই সঙ্গে তারা যখন পঞ্চদশ সংশোধনী আনল, ব্যাপকভাবে সংবিধানের পরিবর্তন করল, তখন কিন্তু তারা এই অনুচ্ছেদ বিলোপ করেনি।

“তারা দোষারপ করছে যে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার ফলে এরশাদ সাহেব এবং জাতীয় পার্টি সমস্ত সংখ্যালঘুদের যত দুর্দশা এবং অত্যাচারের মূল। বাস্তব হল যে তারাও এটাকে সমর্থন করেছে, এটাকে সামনে ধরে রেখেছে।”

সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল।