সর্বশেষঃ

নারিকেলের বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ

নারিকেলের বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ

নারিকেল একটি সুস্বাদু ফল। এর ইংরেজি নাম Coconut বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Cocos nucifera. নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম একটি অর্থকরী ফসল। কাঁচা অবস্থায় একে ডাব বলা হয় যার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। পাকার পর এটাকে ঝুনা নারিকেল বলা হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই নারিকেল খাওয়ার প্রচলন আছে। বাংলাদেশের সর্বত্রই নারিকেল গাছ জন্মায়। তবে উপকূলীয় জেলাসমূহে বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর ও যশোর জেলায় নারিকেলের উৎপাদন বেশি হয়।

নারিকেল কাঁচা অথবা ছোট অবস্থায় ডাব এবং পাকার পর একে ঝুনা নারিকেল বলা হয়। নারিকেল দিয়ে অনেক মজাদার খাবার তৈরি করা হয়। নারিকেলের নাড়ু, নারিকেলের তৈরি সন্দেশ, হালুয়া, পিঠাপুলি, পায়েশ ইত্যাদি। আমাদের দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে খাবার রান্নাতেও ব্যবহার করা হয়।

পুষ্টিগুণঃ

প্রতি ১০০ গ্রাম নারকেলে আছে ৩৫৪ ক্যালরী, ৩৩ গ্রাম ফ্যাট, ২০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৩৫৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ৩.৩ গ্রাম প্রোটিন আছে। এছাড়াও ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি-৬ ও বি-১২ আছে। এবার তাহলে নারিকেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো জেনে নেয়া যাক।

ডাবের পানিঃ

একটি সাধারণ কচি ডাবে আকারভেদে ২শ’ থেকে ১হাজার মিলিলিটার পানি থাকতে পারে। কেননা ডাবের ৯৫ শতাংশই পানি। আর সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও অন্যান্য লবণের পরিমাপ স্থানভেদে একেক রকম। তবে সাধারণভাবে এক লিটার ডাবের পানিতে পটাশিয়াম আছে ৩৫ থেকে ৮২ মিলিমোল, সোডিয়াম ০.৭ থেকে ০.৯ মিলিমোল ও শর্করা ১.২ থেকে ২.৮ মিলিমোল। আর এক লিটার স্যালাইনে পটাশিয়ামের পরিমাণ ২০ মিলিমোল, সোডিয়াম ৭৫ মিলিমোল ও শর্করা ৭৫ মিলিমোল।

স্বাস্থ্য উপকারীতাঃ
১। গবেষণায় দেখা গেছে যে পলিনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় যেখানে প্রধান খাবার হলো নারিকেল সেখানেকার মানুষের কোলেস্টেরল বা হার্টের সমস্যা অনেক কম। এর কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে নারিকেলে যে ফ্যাটি এসিডের চেইন গুলো আছে সেগুলো কোলেস্টেরল বাড়ায় না বরং আথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি কমিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে। এমনকি কিছু কিছু নারিকেলে লরিক এসিড পাওয়া গেছে যা মায়ের দুধে থাকে।

২। নারিকেল বিশেষ কিছু ভাইরাস ধ্বংস করে। যে সব ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, হার্পিস, মামস ইত্যাদি রোগ জন্ম দেয়, নারিকেল সেসব ভাইরাস গুলোকে নষ্ট করে ফেলে। ফলে এধরণের অসুখ-বিসুখ থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়।

৩। আলসার, গলার ইনফেকশন, ইউরিন ইনফেকশন, মাড়ির রোগ, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করতেও নারিকেলের ভূমিকা অপরিসীম।

৪। নারিকেল শরীরের শক্তি বাড়িয়ে দেয় এবং কর্ম উদ্দিপনা জাগাতে সহায়তা করে। হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল ও এমিনো এসিড শোষন করে নিতে সহায়তা করে।

৫। নারিকেল রক্তের ইন্সুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে এবং ডায়াবেটিস জনিত কারণে শরীরের ক্ষতি রোধ করে।

৬। নারিকেল শরীরে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করতে সহায়তা করে এবং দাঁত ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে।

৭। গলব্লাডারকে বিভিন্ন ধরণের অসুখ থেকে রক্ষা করতে নারিকেলের ভূমিকা অনেক। নিয়মিত নারিকেল খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও অন্যানো আরো কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় অনেকখানি।

৮। নারিকেল দাঁতের ক্ষয় রোধে সহায়তা করে।
নারিকেল প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাওয়া রোধ করতে ভূমিকা রাখে।

৯ কিডনীতে পাথর আছে যাদের তাঁরা নিয়মিত খাবার তালিকায় নারিকেল রাখলে ধীরে ধীরে পাথর মিলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১০। নারিকেল থাইরয়েড হরমোনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত নারিকেল খেলে ত্বক কোমল ও সুন্দর হয়। এছাড়াও নিয়মিত নারিকেল খেলে ত্বকে সহজে বয়স জনিত বলিরেখা পড়ে না।

১১। নারিকেল অতিরিক্ত ওজন কমাকে সহায়তা করে। নারিকেল খুব অল্প ক্যালোরিতেই মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে অল্পক্ষণের মধ্যেই শরীরে শক্তি যোগায়। নারিকেল খেলে সহসা ক্ষুধাও লাগে না। তাই গবেষনায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত নারিকেল খাওয়া শুরু করে তাদের বেশ খানিকটা ওজন হ্রাস পায়।

১৩। ত্বক কোমল করে: ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বককে নরম রাখতে সাহায্য করে নারিকেলের শাঁস। নিয়মিত এই শাঁস খেলে ত্বক কোমল ও সুন্দর হয়। এছাড়াও ত্বকে সহজে বয়স জনিত বলিরেখা পড়েতে দেয় না এই নারিকেল।

১৪। চুল ভাল রাখে: চুলে নারিকেল তেল মাখলে ভাল থাকে এটা জানা কথা কিন্তু নিয়মিত নারিকেল শাঁস খেলে মাথায় খুশকি ও শুষ্কতা দূর হয় এবং চুল পড়াও বন্ধ হয়।

১৫। শক্তি যোগায়: নারিকেলে অতিরিক্ত ক্যালরি থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে শক্তি যোগায়। তাই কাজের মাঝে ক্লান্তি আসলে বা হালকা খিদে পেলে নারিকেল শাঁস খান, সঙ্গে সঙ্গে কর্মউদ্দীপনা জেগে উঠবে।

১৬। হার্ট ভালো রাখে: নারিকেল রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হার্টের সমস্যা দূর করে। এর মধ্যে যে ফ্যাটি এসিড রয়েছে তা কোলেস্টেরল বাড়ায় না বরং আথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি কমিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে।

১৭। ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করে: নারিকেল রক্তের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ডায়াবেটিসজনিত কারণে শরীরের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে।

১৮। ওজন কমায়: নারিকেল অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়তা করে। নারিকেল খুব অল্প ক্যালোরিতেই মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে অল্পক্ষণের মধ্যেই শরীরে শক্তি যোগায়। তাই নারিকেলের শাঁস খেলে সহসা ক্ষুধা লাগে না। সেক্ষেত্রে শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক এই নারিকেল শাঁস।

১৯। দাঁত ও হাড় ভালো রাখে: হাড়ের ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে নারিকেল এবং দাঁত ও হাড়ের গঠনেও ভূমিকা রাখে। অস্ট্রিওপোরেসিস, অস্ট্রিও আর্থারাইটিস, যে কোন হাড় সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় নারিকেল শাঁস ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
২০। এছাড়া লিভারের অসুখের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস সি, জন্ডিস ও অন্যান্য লিভারের অসুখে বেশ ভাল কাজ দেয় নারিকেলের দুধ। নিয়মিত নারিকেলের শাঁস খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ও অন্যানো আরও কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায়।

২১। পেটের কৃমি দূর করতে প্রতিদিন সকালে নাস্তার পর এক চামচ নারিকেল খান। এতে পেটের কৃমি দূর হয়ে যাবে।

২২। বাদাম, আখরোট এবং মিশ্রির সঙ্গে নারিকেল মিশিয়ে খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।

২৩। খালি পেটে নারিকেল খেলে নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

২৪। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৫০ গ্রাম নারিকেল খাওয়া সন্তানের জন্য ভালো। এতে সন্তানের গায়ের রঙ ফর্সা হয়।

২৫। রাতে খাওয়ার পরে প্রতিদিন আধাগ্লাস নারিকেলের পানি পান করা উচিত। এতে ঘুম ভালো হবে।

২৬। নারিকেলের মধ্যে বাদাম পেষা মিশিয়ে মাথায় লাগানো ভালো। মাথা যন্ত্রণা কমে যায়।

২৭। নারিকেল তেলের মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগালে খুশকি দূর হয়ে যায়।

২৮। ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে, পানিশূন্যতা প্রতিরোধ এবং শক্তির উৎস হিসেবে কচি ডাবের পানি ভীষণ কার্যকরী।

২৯। পায়ে ফাংগাস ঘটিত কোন ঘাঁ হলে, সেখানে নারিকেল তেল দিলে তা ফাংগাসের মোকাবেলা করে।

ড. উজ্জল কুমার নাথ
প্রফেসর
কৌলীতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহ