সর্বশেষঃ

পঙ্গু ভিক্ষুকদের ৮২.৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয় বাংলাদেশ।

দেশে দুর্ঘটনাজনিত কারণে পঙ্গু হয়ে যারা ভিক্ষাবৃত্তি করছেন তাদের মধ্যে ৮২.৫৩ শতাংশ ভিক্ষুক সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়েছেন এবং ১৭.৪৬ শতাংশ গাছ থেকে পড়াসহ অন্যান্য কারণে পঙ্গু হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৬৩ জন পঙ্গু ভিক্ষুকের উপর সাক্ষাকার ভিত্তিক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার ১৯টি স্থানসহ ধামরাই, সাভার আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ (আরিচা ও পাটুরিয়া ফেরিঘাট) রাজবাড়ি (গোয়ালন্দ ফেরিঘাট) যশোরর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে এই জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয়েছে।

আরও জানা যায়, পঙ্গু ভিক্ষুকদের ৩২.৬৯ শতাংশ মোটরযানের (বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক্টর, ট্রলি) শ্রমিক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছেন।

১৭.৩০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, চান্দের গাড়ি, টমটম, অটোরিকশা, অটোভ্যান, প্যাডেল রিকশা, ঠ্যালাগাড়ি ইত্যাদি) চালানোর সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছেন। ৪২.৩০ শতাংশ মোটরযানের যাত্রী হিসেবে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছেন এবং ৭.৬৯ শতাংশ পথচারী হিসেবে রাস্তায় চলাচলের সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছেন।

দুর্ঘটনার পর মোটরযান মালিকদের কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য সামান্য সহযোগিতা পেয়েছেন ১১.৫৩ শতাংশ ভূক্তভোগী। তবে কেউই মোটরযানের তৃতীয় পক্ষীয় ঝুঁকি বীমার মাধ্যমে কোনো আর্থিক সুবিধা পাননি। দুর্ঘটনার পর চিকিৎসার জন্য আত্মীয়-স্বজন ও সাধারণ মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন সকলেই।

দুর্ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ২৫ শতাংশ ভূক্তভোগী, অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৫৫.৭৬ শতাংশ। মন্তব্য করেননি ১৯.২৩ শতাংশ ভূক্তভোগী। শুধু সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন ৮৪.৬১ শতাংশ ভূক্তভোগী। চিকিৎসার কোনো এক পর্যায়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫.৩৮ শতাংশ ভূক্তভোগী।

দুর্ঘটনার সময় ৫১.৯২ শতাংশ ভূক্তভোগীর বয়স ছিল ১৩-২৫ বছর। ৩০.৭৬ শতাংশের বয়স ছিল ২৬-৪০ বছর এবং ১৭.৩০ শতাংশের বয়স ছিল ৪১-৬০ বছর।

দুর্ঘটনার পর্বে ৩২.৬৯ শতাংশের পেশা ছিল মোটরযানের চালক-শ্রমিক। ১৭.৩০ শতাংশের পেশা ছিল স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের চালক-শ্রমিক। মুদি দোকানী ছিল ১৩.৪৬ শতাংশ, চা দোকানী ও হকার ৯.৬১ শতাংশ, সবজি বিক্রেতা ১১.৫৩ শতাংশ, কৃষি শ্রমিক ও নির্মাণ শ্রমিক ১৫.৩৮ শতাংশ, ঘাটের মাঝি ও মৎস্যজীবী ছিল ৩.৮৩ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসার জন্য পারিবারিক সম্পত্তি (জমি ও গৃহপালিত পশু) বিক্রি করেছেন ৬৫.৩৮ শতাংশ ভুক্তভোগী পরিবার। বিক্রি করার মতো তেমন সম্পত্তি ছিল না ৩৪.৬১ শতাংশ ভূক্তভোগী পরিবারের।

দুর্ঘটনার পূর্বে আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে ৪০.৩৭ শতাংশ বলেছেন মোটামুটি চলছিল। ৫৯.৪২ শতাংশ বলেছেন কষ্ট করে দিনাতিপাত করতাম।

বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মোটরযানে তৃতীয় পক্ষীয় ঝুঁকিবীমা বাধ্যতামূলক আছে এবং এই বীমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশে “মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স এ্যাক্ট-১৯৮৩”-তে মোটরযানে তৃতীয় পক্ষীয় ঝুঁকিবীমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালত ছিল ক্লেইম ট্রাইব্যুনাল।

কিন্তু দুঃখজনক যে, উক্ত আইনের মাধ্যমে কেউ ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন এমন নজির দেখা যায়নি। বীমা কোম্পানীগুলো নিয়মিত প্রিমিয়াম নিলেও ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না।

তাদের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরকারও কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত গরীব মানুষেরা চিকিৎসার জন্য সহায়-সম্বল বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পথের ভিখারীতে পরিণত হয়েছেন।

আবার পূর্বের আইনে কেউ ক্ষতিপূরণ পায়নি এই অজুহাতে সরকার “সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮”-তে মোটরযানের তৃতীয় পক্ষীয় ঝুঁকিবীমা বিলোপ করে একটি “ট্রাস্ট ফান্ড” এর বিধান রেখেছে, যার সাংগঠনিক কাঠামো এবং তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল।

এই তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া খুবই দুরুহ হবে বলে আমাদের আশংকা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” প্রণয়নের এতদিন অতিবাহিত হলেও উক্ত ট্রাস্ট ফান্ড গঠনই হয়নি। অথচ প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে। পঙ্গু ভিক্ষুকদের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবার এবং দেখার কেউ নেই।