সর্বশেষঃ

পাকা আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারীতাঃ

আম আমাদের সবার অতি প্রিয় একটি ফল।আমাদের আশেপাশে হয়ত এমন মানুষ মনে হয়না যে খুঁজে পাওয়া যাবে, যে আম খেতে পছন্দ করে না। উপমহাদেশের সবচাইতে সুস্বাদু ফল হল আম। সাধারণত কাঁচা অবস্থায় এর রং সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ রং আবার কিছু সময় লাল হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যে প্রজাতির আম চাষ হয় তার বৈজ্ঞানিক নাম হল Mangifera indica।
চলছে আমের মৌসুম। স্বাদে গন্ধে ভরা এই পাকা আম সবার পছন্দের তালিকায় রয়েছে। শুধুমাত্র স্বাদেই নয় দেখতেও মনকাড়া আম বিাভন্নভাবে খাওয়া যায়। জুস থেকে শুরু করে আচার তৈরি করে খাওয়া যায়। সংরক্ষণ করে রাখা যায় বিভিন্ন উপায়ে। স্বাদ আর গন্ধেই নয়, আমে রয়েছে পুষ্টিগুণ ভরা। পাকা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ‘এ’। এছাড়াও শরীরের নানা উপকার করে থাকে যেমন; চোখের নানা রোগ, চুলপড়া, খসখসে চামড়া, হজমের সমস্যা দূর করে।আমে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘সি’ সেই সাথে আরো আছে ফাইবার যা সিরাম কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টরল যেমন কম ঘনত্বের লাইপোপ্রটিন এর মাত্রা কমাতে সাহায্য। ত্বকের যত্নেও অনেক উপকারি ভূমিকা পালন করে পাকা আম।

আম আমরা কাঁচা অথবা পাকা যে ভাবেই খায় না কেন তা আমাদের শরীরের জন্য অতান্ত উপকারী। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমের গুণ আরও বেশি। কাঁচা অথবা পাকা যাই হোকনা কেন, আমাদের শরীরকে সুস্থ রোগমুক্ত রাখতে আম বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

আমের পুষ্টিগুণঃ

আমে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ এবং ভিটামিন উপাদান যেমন- ভিটামিন-এ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি৬ রয়েছে। তাছাড়া আরও কিছু পুষ্টি উপাদান পটাসিয়াম, কপার লৌহ এবং এমাইনো এ্যাসিড রয়েছে। এছাড়াও আমে বায়োলজিকাল উপাদান, প্রো ভিতামিন এ বেটা ক্যারোটিন, লুশিয়েন জিলাইক এ্যাসিড, আলফা ক্যারোটিন, পলি পিথানল কিউরেচিন কাম্ফারল, ক্যফিক এ্যাসিডসহ আরও অনেক বিশেষ উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থের জন্য অত্যান্ত উপকারী।

আমের প্রজাতিঃ

পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির মত আম আছে। আমের বিভিন্ন জাত আছে, যেমন- ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, গোপালভোগ, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, কালীভোগ, কাচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা ইত্যাদি। আমাদের দেশে আম গাছকে জাতীয় গাছের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

আমের স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ

১) পাকা আম আমাদের ত্বক সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃণ করে। শুধু তাই নয়, এটি আমাদের ত্বকের ভেতর ও বাইরে থেকে উভয়ভাবেই সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। আম আমাদের ত্বকের লোমের গোড়া পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে ও ব্রণের সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২) আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ লবণের উপস্থিতিও রয়েছে । আমাদের শরীরের দাঁত, নখ, চুল ইত্যাদি মজবুত করার জন্য আমের খনিজ লবণ উপকারী ভূমিকা পালন করে।

৩) সাধারণত পাকা আম ত্বকের লোমের গোড়া পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে ফলে মুখের ও নাকের উপর জন্মানো ব্ল্যাকহেড তা দূর করতে অনেকাংশে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পাকা আম খান তাহলে আপনার মুখের কালো দাগ দূর হবে।

৪) পাকা আমের আঁশে কিছু উপাদান যেমন- ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ থাকায় তা হজমে সহায়তা করে থাকে। আমে আছে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম এটা আমাদের শরীরের প্রোটিন অণুগুলো ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

৫) আমে প্রায় ২৫ রকমের বিভিন্ন কেরাটিনোইডস, উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ ও সবল রাখে।

৬) আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন- বি কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন আমাদের শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরকে রাখে পুরোপুরি সতেজ। যার ফলে খুব দ্রুত ঘুম আসতে সাহায্য করে।

৭) আমে রয়েছে বেটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়ামের পরিমান পর্যাপ্ত থাকায় হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।আমাদের হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮) আপনি যদি প্রতিদিন এককাপ আম খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার শরীরে ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদার প্রায় পঁচিশ শতাংশের যোগান দিতে পারবে। ভিটামিন ‘এ’ আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী। এটি আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে।

৯) আমে প্রচুর পরিমাণে এসিড থাকে যেমন- টারটারিক এ্যাসিড, ম্যালিক এ্যাসিড ও সাইট্রিক এ্যাসিড যা আমাদের শরীরে অ্যালকালাই বা খার ধরে রাখতে সহায়তা করে অনেকাংশেই।

১০) আমের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। স্তন, লিউকেমিয়া, কোলন প্রোস্টেট ক্যান্সারের মত মারাত্মক ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে প্রয়োজনীয় এনজাইমও পাওয়া যায়।

১১) পাকা আম পটাশিয়ামসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আমদের হার্টবিট ও রক্তস্বল্পতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আমাদের হার্টবিটকে সচল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

১২) পাকা আম আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কারে সহায়তা করে। আমের মধ্যে থাকা টারটারিক, ম্যালিক ও সাইট্রিক এ্যাসিড শরীরে অ্যালকোহল ধরে রাখতে সহায়তা করে।

১৩) আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমে ভিটামিন-সি এর পরিমাণ বেশি। যা আমাদের দাঁত ও হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

১৪) আম আমাদের শরীরের ক্ষয়রোধ করে। প্রতিদিন আম খেলে দেহের ক্ষয়রোধ হয় এবং স্থূলতা কমিয়ে শারীরিক গঠনে ইতি বাচক ভূমিকা পালন করে ।

১৫) শুধু তাই নয়, আমের ভেষজ গুণ আমাদের স্কিন ক্যান্সারসহ ভিভিন্ন জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে।

সতর্কতাঃ

পাকা আম খাওয়া ভালো তবে খুব বেশি খাওয়া ঠিক নয়। পাকা আমে চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে যাদের ডায়াবেটিস আছে অথবা হবার সম্ভাবনা আছে তাদের জন্য আম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। মাঝারি মাপের একটি পাকা আমে ৩ গ্রাম ফাইবার থাকে। তাই কেউ যদি পরপর বেশ কয়েকটি আম খেয়ে ফেলেন তবে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ড. উজ্জল কুমার নাথ
প্রফেসর
কালীতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
ময়মনসিংহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *