সর্বশেষঃ

বাংলাদেশের পীর সাহেবের কাণ্ড দেখেন: হাইকোর্ট

রাজধানীর শান্তিবাগের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪৯টি মামলার নেপথ্যে এক পীর ও তার অনুসারীদের জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ সম্বলিত সিআইডি’র প্রতিবেদন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলছেন: ‘বাংলাদেশের পীর সাহেবের কাণ্ড দেখেন।’

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা সিআইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একরামুল আহসান কাঞ্চনের তিন ভাই এবং এক বোন। ১৯৯৫ সালে তার বাবা ডা. আনোয়ারুল্লাহ মারা যান। রাজারবাগ দরবার শরিফের পিছনে ৩ শতাংশ জমির ওপর ৩ তলা পৈতৃক বাড়ি তাদের। বাবার মৃত্যুর পর কাঞ্চনের বড় ভাই আক্তর-ই-কামাল, মা কোমরের নেহার ও বোন ফাতেমা আক্তার পীর দিল্লুর রহমানের মুরিদ হন। কিন্তু রিট আবেদনকারী ও তার অপর ভাই ডা. কামরুল আহসান বাদলকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করেও ওই পীরের মুরিদ করা যায়নি। এরমধ্যেই একরামুল আহসান কাঞ্চনের মা, ভাই ও বোনের কাছ থেকে তাদের পৈতৃক জমির অধিকাংশই পীরের দরবার শরিফের নামে হস্তান্তর করা হয়। আর একরামুল আহসান কাঞ্চন ও তার ভাইয়ের অংশটুকু পীর এবং তার দরবার শরিফের নামে হস্তান্তর করার জন্য পীর দিল্লুর এবং তার অনুসারীরা বিভিন্নভাবে চাপ দেয়। কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তর না করায় পীর দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীদের সঙ্গে একরামুল আহসান কাঞ্চনের শত্রুতা সৃষ্টি হয়। সে শত্রুতার কারণেই একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়।’

সিআইডি’র এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, ‘একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সর্বমোট ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে জিআর মামলা ২৩টি এবং সিআর মামলা ২৬টি। ইতোমধ্যে জিআর ১৫টি মামলা এবং সিআর ২০টি মামলায় আবেদনকারী আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। বর্তমানে ১৪টি মামলা আদালতে বিচারাধীন। যার মধ্যে ৮টি জিআর এবং ৬টি সিআর মামলা রয়েছে। অধিকাংশ মামলার নথিপত্র সংগ্রহের পর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আবেদনকারীর বিরুদ্ধে একাধিক মানবপাচার, নারী নির্যাতন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, হত্যার চেষ্টা মামলাসহ প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, ডাকাতির প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন ধর্তব্য ও অধর্তব্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলো সম্পর্কে প্রকাশ্য ও গোপনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, অধিকাংশ মামলার বাদী, সাক্ষী, ভুক্তভোগীরা কোনও না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং ওই দরবার শরিফের পীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’

সিআইডি’র এই প্রতিবেদন দেখে রোববার হাইকোর্ট বলেন: ‘বাংলাদেশের পীর সাহেবের কাণ্ড দেখেন! জায়গা জমি দখলের জন্য পীর সাহেবরা অনুসারী-মুরীদ দিয়ে কি করে দেখেন! যেখানে একজন মানুষকে একটা মামলা দিলেই জীবন শেষ হয়ে যায়, সেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এত মামলা! এটাতো সিরিয়াস ব্যাপার।’

এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪৯টি মামলা হওয়ার প্রেক্ষাপটে একরামুল আহসান কাঞ্চন ন্যায়বিচার পেতে এবং এ ঘটনার পিছনে কারা তা তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কে একরামুলের বিরুদ্ধে হওয়া ৪৯ মামলার তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে রুলসহ আদেশ দেন। এরপর মামলাকারীদের কয়েকজন হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। আজ সিআইডি’র প্রতিবেদন দেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে আপিল বিভাগের আদেশটি দেখার জন্য এ বিষয়ে শুনানি একসপ্তাহের জন্য মুলতবি করেন।

আদালতে একরামুল আহসান কাঞ্চনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এমাদুল হক বসির। অপর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো: ওজিউল্লাহ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।