সর্বশেষঃ

বিদেশে ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন বরকত ও রুবেল

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর

ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের অব্যাহতি প্রাপ্ত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেল গত ১০ বছরে বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে অর্জিত ২ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন। পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি) এর তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এ অভিযোগে ঢাকার কাফরুল থানায় তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে ঢাকার কাফরুল থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।

এ মামলায় ওই দুই ভায়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী ২০১৫ এর ৪(২) ধারায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে বর্তমান বছর পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদদের মালিক হয়েছেন বরকত ও রুবেল। এছাড়া মাদক কারবার করে এবং ভ‚মি দখল করে অবৈধ সম্পদ করেছেন। এসি নন এসিসহ ২৩টি বাস, ড্রাম ট্রাক, বোল্ডার, পাজেরো গাড়ি মালিক হয়ে এ টাকার উল্লেখযোগ্য অংশ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন তারা।

এজাহারে আরও বলা হয়, প্রথম জীবনে এই দুই ভাই রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে এক বিএনপি নেতার ফুট ফরমাস খাটতেন। তখন তাদের সম্পদ বলতে তেমন কিছু ছিল না। ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর ওই এলাকায় এক আইনজীবী খুন হন। সে হত্যা মামলার আসামি ছিলেন এই দুই ভাই।

এজাহারে আরও বলা হয়, গত ১৮ জুন তিনি এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়ে তদন্ত শুরু করেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে এই দুই ভাই অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেছেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, এই মামলাটি দায়ের করেছে সিআইডি। মামলাটির তদন্ত কাজ সিআইডি পরিচালনা করবে।

সিআইডি’র পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বলেন, মানি লন্ডারিং এর মামলায় এই দুই ভাইকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে। পরে আদালতে তাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।

এদিকে দু’টি পৃথক মামলায় সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলকে আরও দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রবিবার বিকেলে ফরিদপুরের এক নম্বর আমলী আদালতের বিচারিক হাকিম মো. ফারুক হোসাইনের আদালতে এ রিমান্ড শুনানি হয়। এ নিয়ে পাঁচ দফায় এই দুই ভায়ের মোট ২২ দিন রিমান্ড হলো। ইতিমধ্যে চারটি মামলায় তারা ২০ দিন রিমান্ডে ছিলেন। এদিকে, ঢাকার কাফরুল থানায় তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে আরো একটি মামলা হয়েছে।

জানা গেছে, ফরিদপুরে বিআরটিসি বাসের কাউন্টার পরিচালক দুলাল লস্কর বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করেন। ওই মামলার প্রধান আসামী সাজ্জাদ হোসেন বরকতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামচুল আলম চৌধুরীর দায়ের করা আরেকটি চাঁদাবাজির মামলার অন্যতম আসামী ইমতিয়াজ হাসান রুবেলকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ উভয়ের রিমান্ড শুনানিতে ১০ দিনের জন্য রিমান্ড আবেদন করেছিলো।

এর আগে একটি অস্ত্র মামলায় ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের এবং চাঁদাবাজি মামলায় সাজ্জাদ হোসেন বরকতের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন একই আদালত। তার আগে রবিবার দুপুরে বরকত ও রুবেলকে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়। বিকেলে একইভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে তাদের পুলিশ প্রহরায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, রবিবার দুপুরে সাজ্জাদ হোসেন ও ইমতিয়াজ হাসানকে আদালতে হাজির করে দুটি পৃথক মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত গত ৭ জুন রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার মামলার আসামি হিসেবে শহরের বদরপুরসহ বিভিন্ন মহল্লায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ সাজ্জাদ, ইমতিয়াজ ও রেজাউল করিমসহ মোট নয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সূত্র: ইত্তেফাক।