সর্বশেষঃ

মাদক বিরোধী অভিযানের আড়ালে প্রদীপ সিন্ডিকেট

এক যুগে সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান চালানোর সময়ও বেপরোয়া ছিলেন বরখাস্ত টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এ সময় অভিযানের নামে প্রদীপ সিন্ডিকেট হাতিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর ওই টাকায় প্রদীপ দেশে-বিদেশে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি ও ফ্ল্যাট। শুধু তাই নয়, কিনেছেন দামি গাড়িও। এছাড়াও সারা দেশে মাদক বিরোধী অভিযান চালানো হলেও টেকনাফের ইয়াবা কারবারীদের বাঁচিয়ে রাখতেন তিনি। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে টেকনাফ সীমান্ত দিয়েই নিরাপদেই ইয়াবার চালান নিয়ে আসতেন ইয়াবা কারবারীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

একটি সংস্থার সূত্র মতে, ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে সরকার। মাদক বিরোধী অভিযান কে পুঁজি করেই নিরীহ লোকজনকে মাদক পাচারের অভিযোগে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হলেও বন্ধ হয়নি মাদক পাচার। অভিযোগ রয়েছে সেই বিতর্কিত ওসি প্রদীপ ও তার বাহিনী এই ইয়াবা পাচারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারাই মূলত মাদক পাচার, ইয়াবা পাচার জিয়িয়ে রেখেছে নিজেদের স্বার্থে। তাদের স্বর্থের হানি হলে সাধারণ লোকজন এবং চুনোপুঁটি ব্যবসায়ীদের কপাল জুটতো বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার। আর এই টাকা দিয়ে ওসি প্রদীপ ম্যানেজ করত রাজনৈতিক নেতা, মিডিয়াকর্মী ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তর। প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর তার উদ্ধার হওয়া ডায়েরি থেকে পাওয়া গেছে এরকম দুই শত কোটি টাকার হিসাব। জানা যায়, গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ১৬১ জন। এর মধ্যে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মাধ্যমে ঘটেছে ১৪৪টি ক্রসফায়ারের ঘটনা। এসব ক্রসফায়ারের একটি বড় অংশ সংঘটিত হয় মেরিন ড্রাইভ সড়কে। কিন্তু সীমান্তে মাদকপাচার বন্ধ হয়নি একদিনের জন্যও।

উখিয়ার মৌলভি বখতিয়ার মেম্বারের স্ত্রী জানান, গত ২৪ জুলাই তাকে ধরে নেয়ার সেই রাতে ওসি প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে পুলিশি অভিযানে ৫১ লাখ নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মৌলভি বখতিয়ারের এক ছেলেকে ডেকে নিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় আরও বিপুল অঙ্কের টাকা। ওসি প্রদীপ ও উখিয়ার ওসি মর্জিনা মিলে ওই পরিবার থেকে দুই দফায় কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নিয়ে বখতিয়ার মেম্বারকে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার হত্যা করে। এছাড়াও টেকনাফের টাকাওয়ালা মানুষ দেখে তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে ধরে এনে থানার টর্চার সেলে নির্যাতন করেই আদায় করা হতো বিপুল অংকের টাকা। আর যারা টাকা দিত না বা দিতে পারত না তাদেরকে মাসের-পর-মাস সেখানে নির্যাতন করে পরে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হতো। এ ছাড়া দুই দফায় ১২৩ ইয়াবা কারবারিকে আত্মসমর্পণও করান ওসি প্রদীপ। আসলে এটিও ছিল প্রকৃত ইয়াবা কারবারীদের বাঁচিয়ে দেয়া ও মোটা অঙ্কের বাণিজ্য। কিন্তু এতকিছুর পরও থামেনি ইয়াবাপাচার। কক্সবাজার জেলা পুলিশের সর্বশেষ তালিকায়, কক্সবাজারে ইয়াবা কারবারীর সংখ্যা ১ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে শুধু টেকনাফেই রয়েছে ৯১২ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সাজারের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি আছে ৭৩ জন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে তালিকাভুক্ত বড় বড় গডফাদার এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন? তাহলে তাদের মাধ্যমে ইয়াবা বড়ি দেশে প্রতিদিনই ঢুকছে। আর প্রদীপ সিন্ডিকেট তাদের পাহারা দিয়েছে।