সর্বশেষঃ

রুশ-মার্কিন দ্বন্দ্বে ঢাকার জড়ানো উচিত না: বিশেষজ্ঞ মতামত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কেন্দ্র করে ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা জাগিয়ে তুলছে স্নায়ুযুদ্ধের স্মৃতি।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুর মতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের ইস্যুতে পরিণত হওয়ার আগেই ঢাকার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে মস্কোর মন্তব্য ও দুই দেশের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন রোববার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘দুই দেশকেই (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) শান্তিপূর্ণ বার্তা দেওয়া উচিত যে আমাদের নিয়ে টানাটানি করবেন না’।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা দুই পরাশক্তির মধ্যে চলমান কূটনৈতিক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

গত ২২ ডিসেম্বর মস্কোতে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে তিনি বিবৃতি দেন, যা রোববার ঢাকার রাশিয়ান দূতাবাস প্রচার করে।

বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি নাগরিকদের অধিকার নিয়ে ‘চিন্তিত হওয়ার অজুহাতে’ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদির ওপর ‘প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা’ করছেন।

বিবৃতিতে ১৪ ডিসেম্বর শাহীনবাগে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎকার করতে যাওয়া এবং বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার ঘটনাও উল্লেখ করেন তিনি।

জাখারোভা বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘এমন ঘটনা হওয়ারই ছিল’।

মারিয়া জাখারোভা আরও বলেন, সম্প্রতি ব্রিটিশ ও জার্মান কূটনীতিকরাও ঢাকায় একই কাজ করেছে এবং আগামী সংসদ নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করে তোলার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে খোলাখুলিভাবেই পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

শাহীনবাগের ঘটনার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং মানবাধিকার মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক একটি বিষয় বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানায়।

১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে আলোচনায় ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

২০ ডিসেম্বর ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাস একটি বিবৃতিতে বলে, মস্কো বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস রুশ দূতাবাসের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ২১ ডিসেম্বর এক টুইটে লিখে, ওয়াশিংটন অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে।

টুইটে রাশিয়াকে উদ্দেশ্য করে আরও বলা হয়, ‘ইউক্রেনের ক্ষেত্রে কি হস্তক্ষেপ না করার এই নীতি প্রযোজ্য নয়?’। এই ঘটনার পর বাংলাদেশের রুশ দূতাবাস অন্যান্য দেশের ওপর মার্কিন হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত একটি মিম টুইট করে।

সাবেক বাংলাদেশি কূটনীতিক ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির বলেন, দুই দেশের মুখোমুখি অবস্থানের বিষয়ে বাংলাদেশকে আরও সতর্ক হতে হবে।

তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্রই আমাদের অনুসরণ করা উচিত- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়। তাদের দ্বন্দ্বে আমাদের জড়ানো উচিত না। তা না হলে পরিস্থিতি আমাদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে’।

‘আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় আমাদের একার ওপর ছেড়ে দিতে বলা উচিত তাদের।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রাশিয়া অন্যদের কাছে বার্তা দিতে চায় যে পৃথিবী আর এককেন্দ্রিক নয়, বরং আমরা বহুমুখী শক্তি ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

‘অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বিদেশি হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে তাদের [রাশিয়া] আহ্বান থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়,’ বলেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ।

তিনি বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাই। কিন্তু কোনো দেশ যদি মনে করে যে আমাদের শুধু তাদের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে হবে… সেক্ষেত্রে আমি বলব বিশ্ব এখন আর সেই সময়ে নেই’।

তিনি রাজনীতিবিদদের নতুন বিশ্বব্যবস্থা ও মেরুকরণ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।