সর্বশেষঃ

সব জানতেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের জেরায় ডা. সাবরিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় সনদ জালিয়াতির সব খবর জানতেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তখন জেনেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দ্বিতীয় দফার রিমান্ডের প্রথম দিনে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য দিয়ে সাবরিনা বলেন, আমি নিজেই তাদের জানিয়েছি।

জেকেজির জন্য কাজ বাগিয়ে আনতে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার পদকে ব্যবহার করতেন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।

এ পরিচয় নিয়ে তিনি সব খানে প্রভাব বিস্তার করতেন।

নিজের ফেসভ্যালু দিয়েই করেছেন সব প্রতারণা। তার প্রতারণায় সহযোগিতা করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তিনি যে কাজ নিয়ে গেছেন, সফল হয়ে ফিরেছেন। কখনো ব্যর্থ হননি।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, সাবরিনা চিকিৎসক হিসেবে তার যে ফেসভ্যালু, তার যে পরিচিতি সেটা ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করেছেন। সাবরিনা এবং তার স্বামী আরিফের সহযোগিতাকারীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যারা জড়িত তাদের তালিকা করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে তাদের ডাকা হবে।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ডা. সাবরিনা তার ফেসভ্যালুটাকে ক্যাপিটালাইজড করেছে। চিকিৎসক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ বিভিন্ন জায়গায় যে তার পরিচিতি রয়েছে সেটা দিয়েই সে প্রতারণা করেছে। করোনার এই সময়ে সে একটি প্রজেক্ট তৈরি করেছে। তারা প্রজেক্ট অনুযায়ী করোনাভাইরাস আক্রান্তদের কাছ থেকে যেভাবে নমুনা সংগ্রহ ও সেবা দেওয়ার কথা ছিল, সেভাবে দেয়নি। তদন্ত এখন প্রথমদিকে রয়েছে, আমরা তদন্ত করে যদি ক্রিমিনাল অফেন্স পাই সে বিষয়ে ক্রিমিনাল রেকর্ডে নিয়ে আসব। আর যেগুলো বিভাগীয় অপরাধ ও অনিয়ম সেগুলো আমরা লিখিতভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ে জানাব।

আবদুল বাতেন বলেন, সাবরিনা নিশ্চয় কোনো না কোনো জায়গায় সহযোগিতা পেয়েছে। আমাদের তদন্তের জন্য যারা সংশ্লিষ্ট তাদের অবশ্যই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব

আর সরকারি চাকরি করে এমন কোনো কর্মকর্তা যদি তার দায়িত্বের ব্যত্যয় কিছু করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে তার সংশ্লিষ্ট দফতর ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা তার বিষয়ে যে তথ্য পেয়েছি সেটি স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ে জানাব। তারা দেখবেন এটা ক্রিমিনাল অফেন্স নাকি বিভাগীয় অফেন্স। এটা তারাই দেখবেন, তারাই ব্যবস্থা নেবেন। তারা যদি ক্রিমিনাল কোনো অফেন্সের ব্যবস্থার জন্য আমাদের কাছে আসেন, অবশ্যই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতারণার কাজে সুবিধার জন্য সাবরিনা রোগীর নামে নিবন্ধন করা এক মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহার করতেন। অথচ সাবরিনার নামে নিবন্ধন করা দুটি সিম থাকলেও সেগুলো ব্যবহার করতেন না। অন্যের নামে নিবন্ধন করা সিমকার্ড ব্যবহার বড় ধরনের অপরাধ। কারণ, এ ধরনের সিমকার্ড ব্যবহার করে তার দায় অন্যের ওপর চাপানো যায়। জানতে চাইলে সাবরিনা তাদের জানান- সিমটি কার নামে নিবন্ধন করা তা তার জানা নেই। তবে সাবরিনার গাড়িচালক রফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রায় এক বছর ধরে সাবরিনা রোগীর নামে নেওয়া সিমকার্ড ব্যবহার করেছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তারা জানতে পারেন, গত ৪ জুন দুপুরে আরিফ হৃদরোগ হাসপাতালে গিয়ে সাবরিনাকে মারধর করেন। ওই দিনই সাবরিনা তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে গিয়ে জেকেজির সব অপকর্মের কথা ফাঁস করে দিয়ে আসেন। ফিরে এসে রাজধানীর শেরেবাংলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একই সঙ্গে আরিফকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।