সর্বশেষঃ

সিলেটের সাবেক মেয়র কামরান আর নেই

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মারা গেছেন।

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোর রাতে তার মৃত্যু হয় বলে তার ছেলে আরমান আহমেদ শিপলু গ্লোবাল টাইম টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

“আমার আব্বা আর নেই। ৩ টার দিকে তিনি মারা গেছেন,” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিপলু।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র কামরান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন দীর্ঘদিন।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসবে সিলেটের উন্নয়নে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান যে অবদান রেখেছেন সেজন্য মানুষ তাকে সবসময় মনে রাখবে। তার মৃত্যুতে দেশ একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা হারাল।”

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেছেন, “স্বীয় কর্মের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা কামরান গণমানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।”

গত ৫ জুন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় ৬৯ বছর বয়সী কামরানের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার আগে ২৭ মে তার স্ত্রী আসমা কামরান কোভিড-১৯ আক্রান্ত হন।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৭ জুন কামরানকে ঢাকায় নিয়ে এসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে প্লাজমা থেরাপিও দেওয়া হয়েছিল।

কামরানের এপিএস বদরুল ইসলাম জানান, সকাল ৭টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রয়াত এই আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ নিয়ে সিলেটের পথে রওনা হয়েছে।

ছোট ভাই আক্তার আহমদ ইসমত জানান, কামরানের মরদেহ প্রথমে সিলেট শহরের ছড়ারপাড়ে বাসায় নেওয়া হবে। জোহরের পর জানাজা শেষে মানিকপীর টিলায় বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।

বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথমবার সিলেট পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে হন সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান।
২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর কামরান মেয়র মনোনীত হন। ২০০৩ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে জিতে মেয়র পদ ধরে রাখেন তিনি।

২০০৭-০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আরও অনেক রাজনীতিবিদের মত কামরানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

সে সময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কামরান কারাগারে থেকে নির্বাচন করেও বিপুল ভোটে জয়ী হন।

২০১৩ সালের নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে গিয়ে মেয়র পদ হারান কামরান। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি লড়েছিলেন, কিন্তু জয়ী হতে পারেননি।

১৯৮৯ সাল থেকে সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০০২ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হোন কামরান। সেই দায়িত্ব তিনি সামলেছেন প্রায় দেড় যুগ।

২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ পাওয়া কামরান বর্তমান কমিটিতেও একই পদে ছিলেন।

সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের স্মরণে সিটি করপোরেশন ভবনে একটি শোক বই খোলা হয়েছে।

“তিনি দীর্ঘদিন সিলেটের মেয়র ছিলেন। প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, এক মিনিটের জন্য হলেও তার মরদেহ যদি সিটি করপোরেশনে নেওয়া সম্ভব হয়। অবশ্য এই পরিস্থিতিতে তা কতটা সম্ভব আমি জানি না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *