সর্বশেষঃ

৮ শর্তে মাদক মামলার আসামিকে কারাদণ্ডের বদলে প্রবেসন

ভবিষ্যতে কখনো মাদক গ্রহণ, পরিবহন ও বিক্রয় না করাসহ ৮টি শর্তে মাদক মামলার এক আসামিকে কারাদণ্ডের বদলে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে ফেনীর একটি আদালত।

আজ বুধবার (২৮ অক্টোবর) ফেনীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালত -এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসাইন এ রায় ঘোষণা করেন।

প্রবেসনপ্রাপ্ত আসামী মো. হেলাল (২৯) ফেনীর জেলার সোনাগাজী থানার মান্দারী গ্রামের নুর আলমের ছেলে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি নিমাই লাল সূত্রধর এবং আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম মামলা পরিচালনা করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ মার্চ রাত সোয়া দশটায় সোনাগাজী থানাধীন বগাদানা ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের দারুল কোরআন নূরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানার সামন থেকে হেলালকে আটক করে পুলিশ। এ সময় সোনাগাজী থানার এস.আই মোবারক হোসেন ও এ.এস.আই জাফর ইকবাল তাঁর কাছ থেকে ৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেন।

এ ঘটনায় হেলালের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় সোনাগাজী থানার এস.আই মো. মোখলেছুর রহমান ১৩ জুলাই হেলালের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

গত ১৩ অক্টোবর আদালত আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের সময় আসামী অনুতপ্ত হয়ে মাদক সেবনের বিষয়টি স্বীকার করেন। সেবনের উদ্দেশ্যে আসামীর ৫০ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগ সত্য। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে কখনো মাদক গ্রহণ, পরিবহন ও বিক্রয় করবেন না মর্মে তার জবানবন্দিতে অঙ্গীকার করেন।

উক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত সোনাগজীর প্রবেসন কর্মকর্তাকে আসামীর বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। গতকাল মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সোনাগাজী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নাছির উদ্দিন বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এই মামলার ঘটনা, উদ্ধারকৃত আলামত, আসামী পেশায় রাজমিস্ত্রী ও তার বৃদ্ধ বাবা-মা থাকার বিষয়টি এবং আসামী নিজে অনুতপ্ত হয়ে দোষ স্বীকার করায় প্রকাশ্য আদালতে বিচারক আসামীকে ০৮ (আট) টি পৃথক শর্তে ০১ (এক) বছরের জন্য দন্ড ঘোষণা না করে আসামীকে সংশোধন করার উদ্দেশ্যে প্রবেসন প্রদান করেন।

প্রবেসনের শর্তাবলী

আসামী মো. হেলাল কখনো মাদক সেবন, পরিবহন ও বিক্রয় করবেন না। আসামী কখনো ধুমপান করবেন না।
আসামীকে মাদক সেবন থেকে দূরে থাকার জন্য ধুমপান পরিহার করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।আসামী মাদক বিরোধী জনমত ও আন্দোলন এবং জনসচেতনায় ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণ করবেন ও ভূমিকা
রাখবেন।আসামীকে মাদক বিরোধী কার্যক্রমে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রবেসনকালীন প্রতি সপ্তাহের সোমবার ০১ ঘন্টার
জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিস, সোনাগাজী, ফেনীতে উপস্থিত হয়ে প্রবেসন কর্মকর্তার নির্দেশনা মোতাবেক
মাদক বিরোধী প্রচারনায় অংশগ্রহন করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।আসামী প্রবেসনকালীন সময়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের বিষয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবেন।আসামী তার নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় ও তার গ্রামের মধ্যে সরকারী রাস্তার পাশে ১০(দশ) টি ফলজ ও ১০(দশ) টি
বনজ গাছ রোপন করবেন এবং উক্ত বিষয়টি প্রবেসন কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন।আসামীকে প্রবেসন চলাকালীন সময়ে তার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দেখাশুনা ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন
করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।আসামী দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবেসন কর্মকর্তার সাথে প্রতি মাসে নূন্যতম ০১ (এক) বার দেখা করবেন ও তার অগ্রগতি
জানাবেন। এছাড়া প্রবেসন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ রাখবেন। প্রবেসন কর্মকর্তার নির্দেশ মতে তিনি নিজেকে
পরিচালিত করার চেষ্টা করবেন।আসামীকে প্রতি ০১ (এক) মাস অন্তর অন্তর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সোনাগাজী থানা, ফেনীর সাথে দেখা করে তার
অগ্রগতি জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।