করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকার জরুরি থোক বরাদ্দ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা ভাইরাস থেকে জীবন থেকে বাঁচাতে প্রস্তাবিত বাজেটে জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় বর্তমানে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে ২টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প দুটিতে ব্যয় করা হচ্ছে ২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। করোনা চিকিৎসায় দ্রুত সেবা নিশ্চিতে চলতি বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫২৯ কোটি টাকা।
এছাড়া করোনাকালে দায়িত্বপালনকালে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুজনিত কারণে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানী বাবদ ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কোভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বেড়েছে।
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জীবনকে আরও সুরক্ষার লক্ষ্যে ন্যাশনাল প্রিপেয়ার্ডনেস এ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা হয়েছে।
এর বাইরে ২ হাজার ডাক্তার, ৬ হাজার নার্স নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ৩৮৬ জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট, ২ হাজার ৬৫৪ জন ল্যাব এটেন্ডেন্টস ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া রাজস্ব খাতে ১২০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ১৬৫০ জন মেডিকেল টেকনিশিয়ান এবং ১৫০ জন কার্ডিওগ্রাফার সর্বমোট ৩ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব পদের বিপরীতেও বড় অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। যে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এ প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বিশেষায়িত আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে ১৪টিসহ প্রতিটি জেলা শহরে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল স্থাপন ও চালু করা হয়েছে। করোনারোগ নির্ণয়ের জন্য এ পর্যন্ত ৫৫টি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠাকে আধুনিকীকরণ ও উন্নততর সেবা প্রদান প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হচ্ছে। এর জন্য আমরা জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যখাতে ৫২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছি।
এছাড়া করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুজনিত কারণে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানীবাবদ ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ যাচাইয়ের জন্য একটি স্ক্রিনিং অ্যাপ এবং এ ভাইরাস কমিউনিটি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জাতীয় কোভিড-১৯ ডিজিটাল সারভেইল্যান্স সিস্টেম প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই সাথে করোনা মোকাবিলায় দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঋণে এক হাজার ১২৭ কোটি খরচে একটি এবং অন্যটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে এক হাজার ৩৬৬ কোটি খরচে আরেকটি গ্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও করোনা মোকাবিলায় আরও বেশকিছু পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আরও জানান, কোভিড মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাস্টচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), কোরিয়া সরকারসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সহায়তায় প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় মোবাইল ফোনে চিকিৎসা কার্যক্রম জোরদার, সংক্রমণ যাচাইয়ের জন্য একটি স্ক্রিনিং অ্যাপ এবং ভাইরাসটির কমিউনিটি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জাতীয় কোভিড-১৯ ডিজিটাল সারভেইল্যান্স সিস্টেম প্রস্তুত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক ২৯টি গাইডলাইন ও ১১টি জনসচেতনতামূলক উপকরণ প্রস্তুত করা হয়েছে।