সর্বশেষঃ

আরব নারীদের উদ্বেগ

আরব সংস্কৃতির জাহিলি যুগে জীবন্ত নারী-শিশুকে পুঁতে ফেলা হতো! জাহিলি যুগের আরববাসী কন্যাসন্তানের জন্মকে নিজের জন্য অপমানজনক মনে করতেন। রসুল (সা.) জীবনভর দুঃখ-কষ্ট সয়ে অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে জাতিকে আলোর পথ দেখিয়ে গেছেন। জগদ্বাসীর হাতে তুলে দিয়ে গেছেন পবিত্র কোরআন। রেখে গেছেন সভ্যতা ও আদর্শের বাণী। যার অনুকরণে মানুষ খুঁজে নিতে পারে আলোর পথ। আরব ধর্ম প্রচারকের বক্তব্যে শুনেছি, ‘কোরআন ফর অল ম্যানকাইন্ড’। কোরআন সব মানুষের জন্য হলেও মুসলিম বিশ্বের জন্য বিশেষ উপহার। কোরআন মুসলমানদের হাতের অন্যতম শোভা। ভাগ্যগুণে আরবদের হাতে এসেছিল প্রথম। প্রযুক্তির বাস্তবায়নে সেই হাত দখল করে নিচ্ছে মোবাইল।

আরবদের প্রতি দৃষ্টি দিলে হাতে একাধিক মোবাইলও দেখা যায়। বিশ্বের সব জাতিই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। কোনো জাতিকে নিশ্চিত করে দায় দেওয়া অনুচিত। ভয়ের কারণ নেই। এই ধর্মগ্রন্থ কোনো না কোনোভাবে ২৪ ঘণ্টাই পঠিত। আল্লাহ নিজেই কোরআনের রক্ষাকারী। আরব নিউজের লোকাল প্রেস কলামে নারীদের কিছু দাবি প্রায় তুলে ধরা হয়। নারী কলামিস্ট লিখেছিলেন, আরবের নারীরা এককালে উটের পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন, যাকে বলা হতো ‘কাফেলা’। প্রযুক্তির বাস্তবায়নে উটের স্থান গাড়ি দখল করে নিয়েছে। অতএব, নারীর গাড়ি চালানো নিষেধ হতে পারে না। নারীদের একাংশ গাড়ি চালানোর তাগিদে অনেক আগে থেকেই দাবি করে আসছিলেন। বর্তমান কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নিয়ে স্বাধীনতার দ্বার উন্মোচন করেছেন। নারীরা পাচ্ছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স। বিপক্ষের সম্মতিও হয়ে গেছে শীতল। সংস্কৃতিতে যোগ হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। আমি কোনো সংস্কৃতির প্রতিই অতি আকর্ষিত নই। সংস্কৃতির মানুষগুলোর কর্মকান্ডের প্রতি আকর্ষণ বা আগ্রহের সীমা নেই। এক্সপেরিমেন্ট চালাতে পারলে ভালো হতো। তা কী করে সম্ভব! আরবের সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিভাবকই পরিবারের সব সদস্যের ভরণপোষণে দায়িত্ববান ও সচেতন। মা-বাবা এবং স্ত্রীর সেবায় নিয়োজিত রাখেন ভৃত্য। এটি মুসলিম পরিবার ও আরব সংস্কৃতির অংশ। অর্থের জোর থাকলে এনে দেন একাধিক দাস-দাসী। আরবের নারী-পুরুষ একে অপরের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলতে সম্মানার্থে শেখ সম্বোধন দেন। শেখের প্রতি রয়েছে এদের আন্তরিক শ্রদ্ধা। শেখের আভিধানিক অর্থ সরাসরি হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক দীক্ষিত মুসলমান ও তাদের বংশধর; মুসলমানদের সম্মানসূচক উপাধিবিশেষ। আরববাসী শেখ আহ্বানে অত্যন্ত খুশি হন। এ আহ্বানের মুগ্ধতা জটিলতাকেও নিমিষেই সহজতম করে দেয়। সালাম দিয়ে শুধু বলুন, কেয়া ফালেক ইয়া শেখ? (হে শেখ! আপনি কেমন আছেন?)। শেখ ম্যাজিকের মতো কাজ করে। শত সমস্যা থাকলেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। পারতপক্ষে এড়িয়ে যাবেন না। শেখের প্রতি এদের বিশেষ শ্রদ্ধা ও দুর্বলতা সহজেই অনুমেয়।

সব জাতিরই ভালো-মন্দের দিক আছে, থাকে। মন্দ সমালোচনায় না যাই। আমি আমার চারপাশের সবাইকে শেখ সম্বোধন দিয়েই কথা বলি। আমার আছে শেখের সমাহার। নগণ্য হলেও কিছু শেখের আচরণে ভীষণ দুঃখ হয়। কিছু শেখের আচরণ স্মরণ করিয়ে দেয় মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অধিকাংশ শেখই আজকাল আমেরিকান তৈরি যে কোনো পণ্যকেই বলেন মিয়া মিয়া। অর্থাৎ ১০০% খাঁটি।
নারীর অধিকারে আমেরিকান সংস্কৃতি দাবি করে, ‘ইফ সি ইজ ইটিং সি হ্যাজ টু ওয়ার্ক।’ আমেরিকান নারীরা সমান অধিকারে পুরুষের সঙ্গে সবকিছুই অর্ধেক শেয়ার করেন। এমনকি বাসা ভাড়াও। আমেরিকান এক নারী কলামিস্ট লিখেছিলেন, আরবের নারীরা জীবনযুদ্ধে বেশ ভাগ্যবতী। পুরুষসঙ্গী এদের সমস্ত খরচ সহজেই বহন করেন। এদের থাকে একাধিক হুকুমের গোলাম।

কিছু সাপেক্ষে তর্ক-বিতর্ক থাকলেও দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় অনুধাবন করেছি, ইসলামিক জীবন অন্তরার আনন্দ মেনে নিলে আরব নারীদের মতো এত শৌখিন চলফেরা জগতের কোনো নারীই করেন না। করলেও দুর্লভ। কিন্তু এ নারীর আতঙ্ক কোনো দিনই কাটেনি। স্বামী কখন দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে আসেন বলা বাহুল্য। আমার সৌদি কলিগ সালেহ আল-রিফাই তাই বললেন। তার স্ত্রী পাঁচ সন্তানের মা হয়েও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। যদিও সে স্ত্রীকে কথা দিয়েছেন, যত বেশি টাকাই হোক সে দ্বিতীয় বিয়ে করবেন না। স্ত্রীর উদ্বেগ কিছুতেই কাটে না। সালেহ আল-রিফাইয়ের স্ত্রী মাদ্রাসার শিক্ষিকা। যুক্তির দৃষ্টান্তে বলেছেন, আমাকে যেহেতু কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পার না, তোমাকেও তা করতে পারি না। ব্যাপারটা রুচিবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত। তা ছাড়া জাহিলি যুগে পুরুষের তুলনায় নারী ছিল অধিক। আজকের যুগে হলে একাধিক বিয়ের অনুমোদন দেওয়া হতো কিনা কে জানে।

আরবের বাবারা কন্যাসন্তানকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। এক শেখ কথোপকথনের মাঝে বললেন, আই লাভ মাই ডটারস। স্পেশালি ডটারস আর মোর লাভলি টু ফাদার। কেউ আবার ভিন্ন খাতের দৃষ্টিভঙ্গিতে বলছেন, এজ এ কিডস নোবডি লাইক এ ডটার ইন দ্য টুডে’জ ওয়ার্ল্ড।

এখানে কন্যাদের উচ্চশিক্ষা দিলে ইউনিভার্সিটি শেষ করতে বয়স দাঁড়ায় ৩২ থেকে ৩৪ বছরে। উচ্চশিক্ষা মানে চাকরি। চাকরি খুঁজে পেতে আরও দুই/এক বছর লেগে যায়। ৩৫-৩৬ বছরে উন্নীত হলে বেশির ভাগ বিত্তশালী শেখই বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করেন না। এতে অনেক নারীই আজীবন বাবার বাড়িতে চিরকুমারী থেকে যান। চিরকুমারীর সংখ্যাও এ সমাজে কম নয়। পাশাপাশি আছে বিধবা সরণি। যেখানে বিধবাদের একাংশ স্বেচ্ছায় স্থান করে নিয়েছেন সরকারি অনুদানের নির্দিষ্ট ভবনে।

সৌদি আরবের বর্তমান জনসংখ্যা ভিনদেশিসহ প্রায় চার কোটি। শেখদের সঙ্গে কাজের ফাঁকে প্রায় রসালাপ চলে, চালাই। শেখেরা চা ও গাওয়া পানের সঙ্গে হাসি-তামাশায় মিশে থাকতে পছন্দ করেন। কারও কারও আছে ধূমপান ও সিসা পানের আসক্তি। নামাজ পড়েন না এমন কেউ নেই বললেই চলে।

লেখক : প্রবাসী; জেদ্দা, সৌদি আরব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *