সর্বশেষঃ

করোনা ভাইরাস: চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ কিনে বাড়িতে মজুদ রাখলে যে বিপদ

শুধুমাত্র করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এখনো পর্যন্ত কোন ঔষধ আবিষ্কৃত হয়নি। কোন টিকাও নেই। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির যেসব লক্ষণ প্রকাশিত হয়, তার চিকিৎসায় এখন যেসব ঔষধ ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোই দেয়া হচ্ছে কোভিড ১৯ রোগীদের।

চিকিৎসকেরা যেসব ঔষধে সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন সেগুলো প্রচুর পরিমাণে কিনে বাড়িতে মজুদ করে রাখছেন বহু মানুষ। সেই সুযোগে অনেক ঔষধের দাম বেড়ে গেছে। এসব ঔষধ কিনে বাড়িতে মজুদ করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এর নানা ধরনের ঝুঁকি রয়েছে।
যেসব ঔষধের বিক্রি বেড়ে গেছে
ঢাকার কয়েকটি বড় ফার্মেসির সাথে কথা বলে জানা গেল যেসব ঔষধের বিক্রি বেড়েছে তা হল ঠাণ্ডা, হাঁপানি, সাইনোসাইটিস ও অ্যালার্জির ঔষধ। শরীরে নানা ধরনের ‘প্যারাসাইট’ আক্রমণ প্রতিহত করে এমন ঔষধ। ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ প্রতিরোধ করে এমন অ্যান্টিবায়োটিক।

প্যারাসিটামল, ভিটামিন-সি, জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এমন সম্পূরক ঔষধ। জ্বর, শুষ্ক কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ।

এছাড়া ক্লান্তি, মাংস পেশিতে ব্যথা, গলা ও মাথা ব্যথা ইত্যাদির ওষুধ কিনছেন মানুষ। ফার্মেসিগুলো জানিয়েছে এসব প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকেরা কোভিড ১৯ রোগীদের যেসব ঔষধ খেতে বলছেন মূলত সেগুলোই কিনতে আসছেন মানুষজন।

কেন এসব কিনছেন মানুষজন?
আজকাল ঔষধের দোকানে অন্যসময়ের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ দেখা যায়। বেশ কিছু ঔষধ কিনে বাড়িতে রেখে দিয়েছেন ঢাকার এমন এক বাসিন্দা বলছেন, “বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে আমার আস্থা নেই। সেখানে চিকিৎসা সম্পর্কে যেসব খবর পড়ছি, তাতে আমি এখন হাসপাতালে যেতে চাই না। তাই বাড়িতেই দরকারি ঔষধ কিনে রেখে দিয়েছি। একটু ভয় কাজ করছে মনে।”

তিনি বলছেন, আগেভাগে পরিবারের সবার শরীরকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী করে তুলতে চান তিনি। তাই তিনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এমন সম্পূরক ঔষধও কিনেছেন।

ঢাকার মগবাজারের একজন বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা বলছেন, “করোনাভাইরাসের তো কোন ঔষধ নেই। কয়েকটা ঔষধের নাম আমি ফেসবুক গ্রুপে দেখেছি। যদি সত্যিই কিছু হয়, বাজারে এসব ঔষধ যদি না পাওয়া যায়? এরকম ইতিমধ্যেই হচ্ছে শুনেছি। অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না শুনেছি। তাই কিছু ঔষধ কিনে রেখেছি। অক্সিজেনের অনেক দাম তাই সেটা কেনা হয়নি।”

এর ঝুঁকি কোথায়?

ভাইরলজির চিকিৎসক ডা: নজরুল ইসলাম বলছেন, “ধরুন শরীরে কিছু অর্গানিজম থাকে। আপনি বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেললেন বা দরকার না থাকলেও খেলেন, তখন সেই অর্গানিজম অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। নির্দিষ্ট সেই অ্যান্টিবায়োটিক, যেটা আপনি বেশি খেয়েছেন তখন সেটা কার্যকারিতা হারায়। আপনার যখন সত্যিই কোন প্রদাহ তৈরি হবে, তখন সেই অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না অথবা আংশিক কাজ করবে। এজন্য অ্যান্টিবায়োটিক যত কম খাওয়া যায় ততই ভাল।”

তিনি বলছেন, ঔষধ দরকার হলে উপকারী, কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করলে ক্ষতিই বেশি।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, “করোনাভাইরাসে এই ঔষধ কাজ করে, এটা করে না এরকম জনশ্রুতি শোনা যাচ্ছে। কোন চিকিৎসক হয়ত একটা ঔষধের কথা বললেন, কোন দেশের প্রধান হয়ত একটার কথা বললেন, এতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। একারণেই মানুষজন নিজেরা ঔষধ কিনে কিনে মজুদ করছে যা খুবই বিপদজনক।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসির অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলছেন, “প্রতিটা ঔষধেরই কোন না কোন সাইড এফেক্ট আছে। একেক জনের একেক রকম সাইড এফেক্ট হয়। চিকিৎসকেরা প্রশ্ন করে সেগুলো জেনে নেন আর সেই অনুযায়ী ঔষধ দেন। কিন্তু আপনি নিজে নিজে খেলে সেটা জানবেন না। তাতে আরও উল্টো সাইড এফেক্ট হয়ে বিপদ বাড়বে।”

তিনি আরও বলছেন, “এখন দরকার নেই, তবুও একটা রোগ হতে পারে সেটা ভেবে একটা টক্সিক জিনিস শরীরে ঢোকানোর কোন মানে হয় না।”

ঔষধের সংকটের কি সম্ভাবনা আছে?

যে ঔষধগুলো মানুষজন কিনছে সেগুলো বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে বলে বাংলাদেশে সরকার সবাইকে আশ্বস্ত করছে। অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলছেন তিনি মনে করেন না ঔষধের ঘাটতি হবে।
তিনি বলছেন, “বাংলাদেশে ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির কোনটিই কিন্তু একদমই বন্ধ ছিল না। যেসব ঔষধ লোকে কিনছে তা মোটামুটি বাংলাদেশের বেশিরভাগ কোম্পানিই তৈরি করে। যেমন এমন কোন দেশি কোম্পানি নেই যারা প্যারাসিটামল বানায় না। তাদের কাঁচামালও যথেষ্ট আছে। করোনা পরিস্থিতিতে কাঁচামাল আনার ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসন সবাইকে অনুমোদন দিয়ে রেখেছে।”

ঔষধ কিনে মজুদ রাখা কাম্য নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক বাছার বলছেন, “বাজার থেকে কিনে মজুদ করে রাখার ফলে যার সত্যিই দরকার হবে সে হয়ত করোনাভাইরাস হওয়া সত্ত্বেও ঔষধটা যোগাড় করতে পারবে না। অথবা দাম বেড়ে গেলে অনেকে সেটা কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলবে।”

সরকার যা করছে

আজই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন। যাতে বলা হয়েছে, প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ফার্মেসিতে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের বেশি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঔষধ প্রশাসন সাবধান করে দিয়েছে যে এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া বিভিন্ন ফার্মাসিতে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। তবে তারপরও ভয়ে ঔষধ কিনে মজুদ রাখা থামছে না ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *