সর্বশেষঃ

ক্ষোভে ‘বাংলাদেশের অধীনে আসতে চায়’ মেঘালয়ের চারটি গ্রাম

ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা পাকা না করায় বাংলাদেশের অধীনে আসতে চাইছে মেঘালয়ের চারটি গ্রাম। মনিপুর-ভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম “এফপিএসজে রিভিউ আর্টস এন্ড পলিটিক্স” এ বিষয়ে গত বুধবার একটি সংবাদ প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়েছে, আরেকটু উন্নত জীবনের আশায় মেঘালয়ের গ্রামবাসীরা বাংলাদেশের অধীনে যেতে চায়। ওই চার গ্রামের মানুষের ক্ষোভের কথা ভারতের প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ায়ও এসেছে।

মেঘালয়ের গ্রামগুলোর অবস্থা শোচনীয়

হিঙ্গারিয়া, হুরয়, লাহালাইন এবং লেজারি- এই চার গ্রামে মেঘালয়ের ৫ হাজার আদিবাসী বসবাস করেন। বছরের পর বছর ধরে এই অঞ্চলের রাস্তাগুলো অবহেলা আর অযত্নে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, অনেকবার আবেদন করার পরও ভারতীয় প্রশাসন সাড়া দেয়নি। এরপর সম্প্রতি তারা আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন। শুধু রাস্তা নয়, এই অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্কও পাওয়া যায় না। নেই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ।

গ্রামবাসীরা মিলে গত মঙ্গলবার একটি বৈঠকে বসেন। সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নেন ভারত সরকারের দৃষ্টি কাড়তে বাংলাদেশের অধীনে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হবে। কিনজাইমন আমসে নামের এক স্থানীয় ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্তের মানুষের জীবন কোনো সরকারের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা শুধু ভোটের জন্যই ব্যবহৃত হই। সরকার যদি আমাদের সত্যিকার অর্থে ভারতীয় বলে বিবেচনা করে, তাহলে আমাদের সমস্যাগুলো দ্রুত ঠিক করা উচিত। অন্যথায় সাধারণ মানুষের কিছু করার থাকবে না। কঠিন পদক্ষেপ নিতে তারা বাধ্য হবে।’ এই চার গ্রাম ভারতের মেঘালয়ের পূর্ব জয়টিয়া জেলার ভেতর পড়েছে। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে দূরত্ব ২০০ কিলোমিটারের মতো।

কিনজাইমন বলছেন, ‘গ্রামবাসী এখন ক্লান্ত। হতাশ। মিটিংয়ে ৫ হাজার মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার যদি রাস্তা ঠিক করতে না চায়, তাহলে বাংলাদেশকে চার গ্রাম দিয়ে দিতে পারে।’ ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাংলাদেশ সরকারের কাছে রাস্তা ঠিক করার বিষয়ে লিখিত আবেদন করবো।’ করোনার কারণে সৃষ্টি হওয়া লকডাউনের কথা উল্লেখ করে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘সারা পৃথিবী হয়তো এখন প্রথমবার লকডাউনে পড়েছে, অথচ আমরা লকডাউনে আছি আজীবন।’

পাঠকদের এটাও মনে করিয়ে দিই যে, ২০১৮ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মোতায়েনরত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর সদস্যদের বাংলাদেশি মোবাইল সিম ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। তার অভিমত ছিল এতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

মেঘালয় সীমান্তে ভারতীয় সিমের নেটওয়ার্ক নেই বললেই চলে। P.C : Meghalaya Timesতিনি বলেন, ভারতীয় মোবাইল সংস্থাগুলির নেটওয়ার্ক সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেই তাদের জরিমানা ধার্য করা হয়। আর সেই কারণেই আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় সংস্থাগুলি তাদের মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে অতটা উদ্যোগী হয় না। ফলে দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণেই সীমান্তে মোতায়েনরত আমাদের বিএসএফ জওয়ানরা বাধ্য হয়েই বাংলাদেশি মোবাইল সিম ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এটা ভারতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় হুমকির কারণ। অথচ বাংলাদেশি মোবাইল সংস্থাগুলির নেটওয়ার্ক ভারতীয় সীমান্তেও পাওয়া যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে ঢাকা ওই সংস্থাগুলির ওপর কোন জরিমানা চাপায় না। সাংমা আরও বলেন, এটা খুবই কষ্ট দেয় যখন দেখি দেশে থেকেও আমাদের জওয়ানরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার জন্য আন্তর্জাতিক কল (বাংলাদেশ) ব্যবহার করছেন। তাছাড়া বছর পাঁচেক আগে রাজ্যসভায় একবার আলোচনায় উঠে আসে, বাংলাদেশী মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করে মেঘালয়ের কিছু দুষ্কৃতিকারী অপরাধ করছে।

এই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন মেঘালয়ের বিরোধী সাংসদ ডোনকুপার রায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মেঘালয় রাজ্যের বহু মানুষ যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশি সিম কার্ড ব্যবহার করছে। ওটা মানুষের দোষ নয়, সরকারের দোষ। তাই রাজ্য সরকারকে সবার আগে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার আহ্বান করেন। সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ তাঁদের পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে বাংলাদেশি সিম কার্ড ব্যবহার করে কারণ ওইসব এলাকায় ল্যান্ডফোন নেই আর ভারতীয় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ভাল না। তিনি উস্কে দিয়ে আরো বলেন, “জানি, বিষয়টি অবৈধ কিন্তু আমার নিজেরও একটি বাংলাদেশি সিম কার্ড রয়েছে।”