সর্বশেষঃ

চিকিৎসক চতুর্থ স্ত্রী’র ক্ষমতায় অ’পকর্ম করে বেড়াতেন আরিফুল

অনুমোদন ছাড়াই বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ ও ভুয়া নমুনা রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে আটক জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হক চৌধুরীর সব দাপটের উৎস ছিলেন চতুর্থ স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরী।

অবৈধ কর্মকা’ণ্ড চালাতে বাঁধা পেলে কথায় কথায় তিনি দিতেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের হু’মকি আর উচ্চপদস্থদের রেফারেন্স। তার সব অপকর্মের স্বাক্ষী চতুর্থ স্ত্রী ডা. সাবরিনা। সরকারি চাকরিজীবী হয়েও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেননি তিনিও। যদিও স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে ডা. সাবরিনা এখন স্বামীর বি’রুদ্ধে কথা বলছেন।

ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরী দাবি করেছেন, আদর্শের সঙ্গে না মেলায় এক মাসে আগে তিনি জেকেজি ছেড়ে চলে এসেছেন। বিষয়টি তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও জানিয়েছেন। এরপর আরিফুল হক চৌধুরী একদিন তার হাসপাতালে (জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট) এসে ঝামেলা করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং তিনি নিজে থা’নায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এখন তিনি তাঁর বাবার বাসায় অবস্থান করছেন।

আরিফুলের বিরুদ্ধে পরীক্ষা ছাড়াই করোনা শনাক্তের ফল দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। যে দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাসা থেকে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হতো, সে দুটি প্ল্যাটফর্মের বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।

দুই দিনের রিমান্ড শেষে জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরী, সাঈদ চৌধুরী, বিপ্লব দাস ও মামুনুর রশীদকে আদালতে হাজির করা হলে শনিবার ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে এ মামলার অন্য দুই আসামি হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী আ’দালতে দোষ স্বীকার করে জবানব’ন্দি দেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ২৩ জুন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তেঁজগাও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করা হয়। তারা হলেন হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী, জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরী, সাঈদ চৌধুরী, বিপ্লব দাস ও মামুনুর রশীদ। এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে তেঁজগাও থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

মা’মলার এজাহারে বলা হয়, হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে নেতৃত্বে চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে করোনার পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দিতেন।

প্রতারণার অভিযোগ গ্রেফতার আরিফুল চৌধুরীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন বলে জানান মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তা (তেজগাঁও থানার এসআই) দেওয়ান মো. সবুর। পুলিশের কাছে মাদকদ্রব্য ইয়াবাও চেয়েছেন গ্রে’ফতার হওয়া জেকেজি হেলথকেয়ার নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানের এই সিইও। হাজতখানায় থাকা অন্য আ’সামিদের সঙ্গেও খা’রাপ ব্যবহার করেন তিনি। হাজতখানার লাইট ভেঙে ফেলেন। ছিড়ে ফেলেন সিসি ক্যামেরার তার।

দেশে করো’নার প্রকোপ শুরুহওয়ার পর পরই এলাকা ভিত্তিক ফ্রি করোনার নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পায় জেকেজি হেলথ কেয়ার। কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও তার কর্মকা’ণ্ডের জন্য বেছে নেয় সরকারী তিতুমির কলেজ। প্রশিক্ষণের নামে কলেজ ক্যাম্পাসে সারারাত পার্টি করা নিয়ে কলেজের স্টাফদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনাও ঘটায় জেকেজি গ্রুপের কর্মচারীরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৩ জুন অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানার কাছে ১৩ হাজার পিস পিপিইর চাহিদা নিয়ে যান জেকেজির সিইও আরিফুল চৌধুরী। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয় ৭ টি বুথের বিপরীতে ১৪টি পিপিই বরাদ্দ দেওয়া হবে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাসিমা সুলতানাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার হু’মকি দেন আরিফ। নাসিমা সুলতানা এ বিষয়ে কিছু না বললেও অস্বীকার করেননি ঘটনাটা।

আরিফুলের এসব হুমকি ধামকির পেছনে ছিল চতুর্থ স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরী। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের রেজিস্টার্ড চিকিৎসক হয়ে তিনি ছিলেন জেকেজি হেলথ কেয়ারের কথিত চেয়ারম্যান। স্বামীর প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে নানা অনৈতিক উপায় অবলম্বনের অভিযোগও আছে তার বি’রুদ্ধে। এতে নাম এসেছে বিএমএর আরেক বড় নেতারও।

সরকারের অনেক উচ্চপদস্থদের সঙ্গে উঠাবসার সুবিধা নিতো এই দম্পতি। তাদের সঙ্গে তোলা ছবিকেও অ’স্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন তারা। তবে জুনের শুরু থেকে আরিফুলের সঙ্গে মনোমালিন্যর পর দুরত্ব শুরু হয় দুজনের।

পুলিশ জানিয়েছে, আরো বিস্তৃতি পরিসরে এই চক্রের প্রতারণ ও দু’র্নীতি ধরার জন্য মাঠে নামবে তারা। তারা বের করার চেষ্টা করছে এদের সঙ্গে আর কে কে জড়িত। পুলিশ বলেছে, গ্রেপ্তারের পর আরো অন্তত ৩ জন নারী আরিফুলের স্ত্রী দাবি করে নানা অভিযোগ করেছেন।