সর্বশেষঃ

চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হবে বাংলাদেশের ৭ হাসপাতালে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

করোনাভ্যাক নামের এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ

কভিড-১৯ ভাইরাসের চিকিৎসায় চীনের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। চীনের একটি ভ্যাকসিনকে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিআরবি) কে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে বাংলাদেশের সাতটি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এই ট্রায়াল চালানো হবে। এখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রশাসনিক অনুমোদনের পরই শুরু হতে পারে এই ট্রায়াল। চীনের ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিষ্ঠানটির নাম সিনোভ্যাক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। সিনোভ্যাক তাদের এই ভ্যাকসিনের নাম রেখেছে ‘করোনাভ্যাক’। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। বিএমআরসির পরিচালক ডা. মাহমুদ-উজ-জাহান জানান, চীনের তৈরি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বাংলাদেশে করার অনুমতি চেয়েছিল বেইজিং। এ জন্য আইসিডিডিআরবি অনুমোদন চেয়ে প্রটোকল জমা দিয়েছিল। সেই প্রটোকলের আলোকেই নৈতিক অনুমোদন দিয়েছে এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। এখন তারা যেসব হাসপাতালে এ পরীক্ষা চালাবে সেসব হাসপাতাল থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন নিতে হবে। যে সাতটি প্রতিষ্ঠানে টিকার পরীক্ষা হবে সেগুলো হলো- মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিট-১, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইউনিট-২ এবং ঢাকা মহানগর হাসপাতাল। মাহমুদ-উজ-জাহান জানান, বিএমআরসির কাছে আইসিডিডিআরবির পক্ষ থেকে যে প্রটোকল দেওয়া হয়েছে, তাতে ৪ হাজার ২০০ জনের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে। তবে ৪ হাজার ২০০ জন টিকা পাবেন না। এদের মধ্যে অর্ধেক টিকা পাবেন, অর্ধেক পাবেন না। এটাই গবেষণার নিয়ম। জানা গেছে, করোনভাইরাসটির একটি মৃত সংস্করণ ব্যবহার করে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হচ্ছে। চীন থেকে এখন পর্যন্ত যে পাঁচটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে, সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনটি এর মধ্যে অন্যতম। ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনটির দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। চলছে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রস্তুতি। বড় আকারে তৃতীয় ধাপের ভ্যাকসিন পরীক্ষা চালাতে ইতিমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুমোদন পেয়েছে চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ (সিএনবিজি)। ট্রায়াল চলার কথা ব্রাজিলেও। সেখানকার ব্রাজিলের জৈবপ্রযুক্তি সংস্থা ইনস্টিটিউটো বুটানটানের সঙ্গে চুক্তি করেছে সিনোভ্যাক। পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর পরীক্ষা চালানোর আগ্রহ দেখায় দেশটি। এখন আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে বাংলাদেশে চালানো হবে ট্রায়াল। বেইজিংভিত্তিক সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড গত মাসে এই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষে দাবি করেছিল, তাদের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। চীনে চালানো প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় এ ফল এসেছে। তখন সিনোভ্যাক তাদের ফলাফল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মানবদেহে পরীক্ষায় চীনে চালানো প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ৭৪৩ জন সুস্থ মানুষকে দুই ধাপে ভ্যাকসিন ও প্লাসেবো (ভিন্ন ওষুধ) দেওয়া হয়। এতে মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯০ শতাংশ মানুষের শরীরের ১৪ দিনের মাথায় নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা গেছে। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লুর টিকা বাজারজাত করে আলোচনায় আসে সিনোভ্যাক বায়োটেক। তখন প্রথম কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি হিসেবে এ টিকা বাজারে আনতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটি। বেইজিংভিত্তিক বায়োটেক সংস্থাটি এবার ১০ কোটি করোনা ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে একটি বাণিজ্যিক প্ল্যান্ট তৈরি করছে। সিনোভ্যাকের গবেষক লুও বৈশানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভ্যাকসিনটি সাফল্যের বিষয়ে তিনি কতটা আশাবাদী? জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই সফল হবে। ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত।’ নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যানুসারে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১৫৫টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে ২৩টি ভ্যাকসিন হিউম্যান ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। ১২৩টি এখনো রয়েছে ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে। প্রথম ধাপের ট্রায়াল হয়েছে ১৫টির, দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল হচ্ছে ১১টির, তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে রয়েছে ৪টি এবং একটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

গ্লোবাল টাইম ২৪ডটকম