সর্বশেষঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কোনো কিট ‘আবিষ্কার’ই করেননি

৩০ মিনিটে করোনা শনাক্তের ‘বিশাল এই সফলতা’র খবর দেশবাসীকে জানানোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশের সকল গণমাধ্যমে একটি প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছে। কিন্ত প্রকৃতপক্ষে সেখানে তাদের অবদান কতটুকু?

প্রথমত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কোনো কিট আবিষ্কার করে নাই। তারা অন্যের আবিষ্কার করা কিট দিয়ে শুধুমাত্র করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছে। আই রিপিট ‘শনাক্ত করেছে’। যে কিট নিয়ে এতো উচ্ছ্বাস সেটি উৎপাদন করেছে ‘আমেরিকান মলিকিউলার বায়োলজি রিএজেন্ট’ এবং ‘নিউ ইংল্যান্ড বায়োল্যাবস’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান যারা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশি নয়।

বাংলাদেশে এই কিটের পরিবেশক হচ্ছে ‘বায়োটেক কনসার্ন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান যারা জিনোমিক্স, প্রোটিওমিক্স, মাইক্রোবায়োলজি, মলিকিউলার ডায়াগনস্টিকসে ব্যবহৃত হয়ে এমন সব প্রোডাক্ট বিক্রি করে। এটা একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই ভাইরাস শনাক্তের জন্য ‘র‌্যাপিড কলোরোমেট্রিক ডিটেকশান’ বা ‘RT Lamp Test’ নামে একটি পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন, যেটি আজ থেকে চার মাস আগে চীনের শেনিয়াং শহরের ‘বায়টেক এবং বায়োমেডিসিন সাইন্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী শিউসান ইন এবং ওয়েই-হুয়া চেন এর নেতৃত্বে ডেভেলপ করা হয়।

অর্থাৎ এই কিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আবিষ্কার করে নাই, ভাইরাস শনাক্তের পদ্ধতিও তারা আবিষ্কার করে নাই। তারা যেটা করেছে সহজ বাংলায় সেটা হলো, কিটটা ঠিকমতো কাজ করে কিনা সেটা তারা যাচাই করেছে এবং তারা প্রমাণ পেয়েছে এই কিট দিয়ে অল্প সময়ে (৩০-৪০ মিনিট) ভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব।

কিন্তু ‘বিশাল এই সফলতা’র খবর দেশবাসীকে জানানোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজকে সন্ধ্যায় দেশের সকল গণমাধ্যমে একটি প্রেস রিলিজ পাঠিয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর আবিষ্কারের আকালের খবরে নিমজ্জিত থাকা গণমাধ্যমগুলোও এমনভাবে সংবাদ করেছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা অনেক বড় একটি কাজ করে ফেলেছেন। শিক্ষার্থীদেরও এ সংবাদ নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।

কিট ঠিকমতো কাজ করে কিনা সেটা যাচাই করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, যেটা গণস্বাস্থ্যের উদ্ভবিত কিটের ক্ষেত্রে তারা করেছে। এরপর সেটার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাঝখান দিয়ে এ ক্ষেত্রে এই স্ট্যান্টবাজিটা করলো কেনো বুঝি না।

একটা জিনিস দেখলাম, এই পরীক্ষণে গবেষকদলের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষক। আবার বিদেশি এই কিটটির বাংলাদেশে একমাত্র পরিবেশক ওই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তাদের প্রতিষ্ঠানে বায়োটেকনোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিট্রি, মলিকিউলার বায়োলজির এক্সপার্টরাও কাজ করেন।

বাজারে বিক্রির জন্য ‘বায়োটেক কনসার্ন’ নামে ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটা যে হাজারগুণ শক্তিশালী তা যে কেউই বিনা বাক্যে মানবে। তবে হ্যাঁ, নতুন এই কিটের মাধ্যমে ৩০ মিনিটে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা শুরু হলে সেটা, দেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার চিত্র আমূল পাল্টে দেবে।

লেখক- তারেক হাসান নির্ঝর, সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *