সর্বশেষঃ

বহিরাগত সন্ত্রাসী তান্ডবে বাকেরগঞ্জ উত্তপ্ত, রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার/মোঃজিয়াউল হক
জমি সংক্রান্ত বিরোধ কেন্দ্র করে বহিরাগত সন্ত্রাসী তান্ডবে বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি ইউনিয়ন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এ ঘটনায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষোভ বিক্ষোভে পরিণত হয়ে যেকোনো সময় ভয়াবহ রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের রূপ নিতে পারে। ঘটতে পারে খুনোখুনির ঘটনা।

বাকেরগঞ্জের পার্শ্ববর্তী উপজেলা বেতাগীর তালগাছিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রশীদ খানের পুত্র নাসির উদ্দিন খান জজ মিয়া এবং নিয়ামতির মৃত আব্দুর রশীদ হাওলাদারের পুত্র নূর হোসেনের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এ বিরোধ এখন নিয়ামতির সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মামলা-হামলা রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সর্বস্তরের জনতা। বিরোধ মিটিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য নূর হোসেন প্রথমে স্থানীয় থানা পুলিশ এবং পরে আদালতের শরণাপন্ন হলেও প্রতিপক্ষ জজ মিয়া কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসীবাহিনী দিয়ে নিয়ামতি এলাকাজুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। এতে ফুঁসে উঠেছে শান্তিকামী জনতা। যেকোনো মূল্যে সন্ত্রাসীদের মামলা-হামলা থেকে নিজেদের রক্ষায় তারা প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, বেদখল প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে ভূ’মিদস্যু জজ মিয়ার ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রয়োজনে খুন করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। সূত্র জানিয়েছে, বাকেরগঞ্জ ছাড়াও বরগুনার বেতাগী, ঝালকাঠীর নলছিটি এবং পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার পেশাদার খুনিদের সাথে চুক্তি করেছেন। গত ২২ জুলাই এ চুক্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পেশাদার ভাড়াটে খুনিরা বর্তমানে নিয়ামতির সীমান্ত এলাকা বেতাগীর বেশ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিয়েছে।

মাসাধিক সময় ধরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নিয়ামতি এলাকায় মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করায় স্থানীয় মানুষ প্রাণনাশের আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছে। হারিয়ে গেছে তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন পদ্ধতি। এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মহড়া এবং হাকডাকে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দহরমমহরমে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিয়ামতির স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতার কারণে শঙ্কিত। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা সালিশ-বৈঠকে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আদালত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার তাগিদ দিয়েছিলেন। একারণে ভূ’মিদস্যু জজ মিয়ার ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনীর কিলিংমিশনের টার্গেটে পড়ছেন নিয়ামতি আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মিরা।

হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিমল চন্দ্র দাস বলেন, আমরা হতবম্ব! বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের তান্ডবে শান্তিকামী নিয়ামতিবাসীর স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়টি কেউ মেনে নিতে পারছেন না। জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকতে পারে। বিরোধ মীমাংসার জন্য আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। এছাড়া গ্রাম আদালত, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। কিন্তু কোনো ধরণের শান্তিপ্রিয় প্রক্রিয়ায় সমস্যা সমাধানের পথে না গিয়ে সন্ত্রাসী ব্যবহার করা কোনোভাবে কাম্য নয়। তিনি মনে করেন, এটি সুদূরপ্রসারি কোনো পরিকল্পণার অংশ। খুনোখুনির আশঙ্কা প্রকাশ করে দুঃসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তাদিগ দেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিমল চন্দ্র দাস।

নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন শরীফ (মাসুম মাস্টার) জানান, নূর হোসেন বিএনপি’র সমর্থক। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ নেই। তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ি। নিয়ামতি বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি কোনো অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলে কিছু না কিছুতো আমরা জানতাম। জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে কয়েকবার সালিস-মীমাংসার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু সমাধানের আগেই জবর-দখল করার বিষয়টি অবশ্যই ত্রুটিপূর্ণ। রুহুল আমিন শরীফ আরো বলেন, নূর হোসেনের নাগরিক অধিকার হরণ করে মিথ্যা মামলা দিয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, জজ মিয়া যাদের নিকট থেকে জমি ক্রয় করেছেন, তারা ওই পরিমান জমি পাবেন না। এছাড়া কাগজে যে পরিমান জমি আছে, বাস্তবে তা নেই। এ অবস্থায় অন্যের জমি জবর-দখল করে নিজের ষোলআনা আদায় করবেন, তা কোনোভাইে ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।

ভুক্তভোগী নূর হোসেন ন্যায় বিচার দাবী করে বলেন, আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। এছাড়া সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিবেন না, এমন বিশ্বাস আমার রয়েছে।

অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন খান জজ মিয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কথা অস্বীকার করেন। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দহরমমহরম ও তান্ডবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। (চলবে)।