সর্বশেষঃ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন প্রকল্প থেকে সরে গেল যুক্তরাষ্ট্র

সারা পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গবেষণা, উৎপাদন এবং সুষ্ঠুভাবে বিতরণের লক্ষ্যে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্ল্যোবাল অ্যাক্সেস (কোভ্যাক্স)’ নামে একটি উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ইতোমধ্যে ১৭০টিরও বেশি দেশ এতে অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। তবে বৈশ্বিক এ উদ্যোগে যোগ দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, করোনা মহামারি তারা একাই মোকাবিলা করবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স পরিকল্পনার সঙ্গে রয়েছে সিইপিআই (কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশসন) এবং গ্যাভি দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের মতো আন্তর্জাতিক জোট। এতে যোগ দিয়েছে জাপান, জার্মানি, ইউরোপিয়ান কমিশনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্ররাও।
তবে এ উদ্যোগের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচ)ও যুক্ত থাকায় তাতে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জুড ডিয়ার বলেন, ‘এই ভাইরাসকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে থাকবে। তবে আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং চীন প্রভাবিত বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোর কাছে বাঁধা থাকব না।’

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জাড ড্রি এক বিবৃতি জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে টিকা ও থেরাপি গবেষণা, উন্নয়ন ও পরীক্ষা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এতে কার্যকর ও উদ্ভাবনী ওষুধ পাওয়া যাবে। এটি সরকারি কোনো লাল ফিতায় আটকে থাকবে না। ভাইরাসকে পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পাশে থাকবে তবে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীন দ্বারা প্রভাবিত বহুপক্ষীয় সংস্থা দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকবে না।
গত মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এ সময় সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেশটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় সবচেয়ে বেশি দাতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের অভিযোগ, চীনা প্রভাবে পরিচালিত হয় সংস্থাটি।

করোনার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ওষুধ ও টিকা উদ্যোগ থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার টিকা আগেভাগে পেতে অনেক দেশ আগাম ফরমাশ দিয়ে রাখছে। ট্রাম্প প্রশাসন গত বুধবার টিকা পেতে অনেক বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা পেতে টিকা উৎপাদনকারী ফাইজার ও বায়োএনটেকের সঙ্গে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছে দেশটি।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির বৈশ্বিক স্বাস্থ্য আইন বিষয়ের অধ্যাপক লরেন্স গস্টিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একা চলার পরিকল্পনা নিয়ে অনেক বড় জুয়া খেলছে।’
ডার্টমাউথের গিজেল স্কুল অব মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক কেন্ডাল হোৎ বলেন, ‘এটি অনেকটা বিমা থেকে বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।’ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে পারে এবং একইসঙ্গে কোভ্যাক্সেও অংশ নিতে পারে। সাধারণ ঝুঁকি বিবেচনার দিক থেকে এটি (কোভাক্সে যোগ না দেয়া) খুবই অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

জেনেভার গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গ্লোবাল হেলথ সেন্টারের সহ-পরিচালক স্যুরি মুন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যখন বলছে ভ্যাকসিন সুরক্ষায় তারা কোনও বহুপাক্ষিক প্রয়াসে অংশ নেবে না, তখন এটি সত্যিই বড় ধাক্কা।’ তার মতে, মহামারির মধ্যে প্রশ্নটা যখন ভ্যাকসিনের, তখন দেশগুলোর আচরণে জনস্বাস্থ্যের চেয়ে রাজনৈতিক প্রভাবই মুখ্য হয়ে উঠছে।