সর্বশেষঃ

সংসদে তোপে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনাভাইরাস মহামারিতে অক্সিজেন সঙ্কট, স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম, সংসদে দেয়া বক্তব্যের জের ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লজ্জাহীন উল্লেখ করে তার পদত্যাগ দাবি জানান তারা। সাতক্ষীরা ও বগুড়ায় অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেন তারা। অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনার জন্য জেলায় জেলায় অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগীরা মারা যাচ্ছেন।

সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সাংসদেরা মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করেন। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে ছিলেন।

পয়েন্ট অব অর্ডারে তারা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি থাকার পরেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধিবেশনের না থাকায়, এসময় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোতে সময় থাকা সত্বেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জেলা-উপজেলার হাসপাতালে অভিজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগসহ পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতেরও দাবি জানান বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।

পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অক্সিজেন সংকটের কথা প্রথম তোলেন বগুড়ার বিএনপির সাংসদ জি এম সিরাজ। তিনি বলেন, অক্সিজেনের অভাবে বগুড়ায় ২ দিনে ২৪ জন মারা গেছেন। কোভিডের জন্য নির্ধারিত মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ২৫০ বেডের। এর মধ্যে আইসিইউ বেড আছে আটটি। কিন্তু হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা আছে মাত্র দুটি। ফলে বাকি আইসিইউ বেড কোনো কাজেই লাগছে না। তিনি জানান, বগুড়ায় ৩টি হাসপাতালের ৪৫০টি বেড রোগীতে ঠাসা। নতুন রোগী ভর্তি হতে পারছেন না। প্রতিটি হাসপাতালে ২০টি হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

বিরোধী দলের উপনেতা জাতীয় পার্টির জি এম কাদের দাঁড়িয়ে সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য দেন। তবে তিনি শুরুতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বছর আগে যে অবস্থায় ছিল, এখনো সেখানেই আছে। কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি তার নিজ এলাকার হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য যেসব চিঠি দিয়েছেন, সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো পুনরুল্লেখ করেন। তবে এগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান। জি এম কাদের বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তিনি ছয়-সাতবার ফোন দিলেও ধরেননি। মন্ত্রীর সহকারীদের ফোন করার পর মন্ত্রীকে জানানোর কথা বলি। কিন্তু মন্ত্রী ফোন করেন না।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি বলেন, উনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) যে কী মানুষ? লজ্জা-শরম নেই। তিনি এক দিনও কোনো হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখেননি কী হচ্ছে? তিনি শুধু জুম মিটিং করেন। মুজিবুল হক আরো বলেন, মন্ত্রী আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করেছেন। আমাদের দেশে আমেরিকার চেয়ে কম লোক মারা যায়। এটা কি তার কৃতিত্ব? এক বছর মন্ত্রী কী করলেন? ৩৭টি জেলায় অক্সিজেন নেই। মানুষ মারা যাচ্ছে।

জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সাতক্ষীরায় অক্সিজেনের অভাবে এক ঘণ্টায় সাতজন ছটফট করে মারা গেলেন। নার্স, ওয়াড র্বয় ও চিকিৎসকেরা কী করলেন? তিনি বলেন, আইসিইউ, এসডিইউতে রোগী গেলে কোনো চিকিৎসা হয় না। সেখানে কী হয়, কেউ জানে না। মানুষের মৃত্যুর কি কোনো দাম নেই? একটা তদন্ত কমিটি করুন। এর প্রতিবেদন প্রকাশ করুন।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, মাস্ক নিয়ে কথা হল। সেদিন আমি এখানে বলেছিলাম, মন্ত্রীকে ডিরেক্ট বলিনি। বলেছিলাম চার টাকার মাস্ক ৩৫৬ টাকায় কেন কেনা হল? উনি তদন্ত করবেন, দেখবেন, ব্যবস্থা নেবেন। এই হল মন্ত্রীর দায়িত্ব।

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এর মাধ্যমে গোটা হাউসকে অপমান করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেছিলেন যে সাংসদেরা জেলা হাসপাতালের চেয়ারম্যান। তারা দায়িত্ব পালন করেন না। মন্ত্রীর এই বক্তব্য ঠিক নয়। এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা দরকার।

হারুনুর রশীদ আরো বলেন, সংসদে ৯০ ভাগ সাংসদ সরকারি দলের। তাহলে কি সরকারি দলের সাংসদেরা দায়িত্ব পালন করছেন না? তিনি বলেন, আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। এটা দেখতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্যসহায়তা দিতে হবে।