সর্বশেষঃ

সমাধান ছাড়াই নীলনদ নিয়ে আলোচনা শেষ

নীলনদের ওপর বিশাল জল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে চায় ইথিওপিয়া। এর জন্য গত ৬ বছর যাবত চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশটি। সেই লক্ষ্যে একটি বাঁধ তৈরি নিয়ে মিশরের সঙ্গে বিরোধ চলছে। বাঁধ নির্মাণ সফল হলে নীলনদের পানির নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে ইথিওপিয়ার কাছে। যেটি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মিশরের জন্য।
ইথিওপিয়া যদি জল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে পারে তবে এটি হবে গোটা আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড় জল বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু এই পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মিশর ও সুদান। শত বছর থেকেই নীলনদের পানির হিস্যা নিয়ে বিরোধ চলছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে।
দীর্ঘদিনের এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মিশর, সুদান এবং ইথিওপিয়া মিলে চার বছর ধরে আলোচনা করছে। তবে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। অন্তত ১৫ কিলোমিটারের এই বিশাল বাঁধ নির্মান হলে ইথিওপিয়া নীলনদের পানির নিয়ন্ত্রণ পাবে। জল বিদ্যুৎকেন্দ্র নদের পানি সারিয়ে না ফেললেও প্রবাহ পরিবর্তন করে দেবে।

উত্তরাঞ্চলে নীলনদের পানির অন্যতম উৎস নদী ব্লু নীলে ২০১১ সালে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করে ইথিওপিয়া, যেখান থেকে নীল নদের ৮৫ শতাংশ পানি প্রবাহিত হয়। দেশ দুটির বিরোধের মধ্যে পড়েছে সুদান। আশঙ্কা করা হচ্ছে এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধও শুরু হতে পারে। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ডাকে ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে বৈঠক করতে যায়নি ইথিওপিয়া।
ইথিওপিয়ার পানিসম্পদ ও জ্বালানিমন্ত্রী বেকেলে সেলেশি অভিযোগ করেছেন, কোন চুক্তিতে পৌঁছানোর ইচ্ছা নেই মিশরের। তবে মিশরের পানি সম্পদ মন্ত্রী মোহামেদ আবদেডল আতেকে উদ্ধৃত করে বলেন, আলোচনায় সবগুলো পক্ষ সব বিষয়ে স্বচ্ছতা অর্জন করেছে, যার মধ্যে বাঁধের পানি ভরাটের মতো বিষয়ও রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সঙ্কট নিরসন সংস্থার পরিচালক ইলিসা জবসন বলেন, ‘এই আলোচনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তাই একটি সমাধানের জন্য তিনটি দেশ আফ্রিকান ইউনিয়নে তাদের প্রতিবেদন জমা দিবে। আমরা মনে করি এখন পর্যন্ত যা আলোচনা হয়েছে তা খুবই ফলপ্রসূ। এ বিষয়ে খুব দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত পৌঁছানো সম্ভব হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যাবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আলোচনার টেবিল থেকে ওঠা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।’
অন্যদিকে, পানির জন্য নীল নদের ওপর ৯০ ভাগ নির্ভর করে মিশর। ঐতিহাসিকভাবেই মনে করা হয় যে, নীল নদের স্থিতিশীল পানি প্রবাহ থাকাটা মিশরের টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ১৯২৯ সালের একটি ও ১৯৫৯ সালের আরেকটি চুক্তিতে মিশর এবং সুদানকে নীল নদের পানির অধিকার দেয়া হয়।
নদীর উজানে যে প্রকল্প পানি প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে, সেখানে ভেটো দেয়ার ক্ষমতাও দেয়া হয়। কিন্তু কোন নথিপত্রে চুক্তির বাইরে থাকা দেশগুলোকে যুক্তকরা করা হয়নি, যার মধ্যে ইথিওপিয়ার ব্লু নীলের পানি নীল নদে অনেক বেশি অবদান রাখে। রাখা হয়নি তাদেরও।
ইথিওপিয়া বলছে, শতবর্ষ পুরনো ওসব চুক্তি মানতে তারা বাধ্য নয়। ২০১১ সালে দেশটি বাঁধের কাজকর্ম শুরু করে। কিন্তু নীলনদে পানি প্রবাহ কমে গেলে লেক নাসেরকে প্রভাবিত করবে। যার ফলে মিশরের আসওয়ান বাঁধে পানির প্রবাহ কমে যাবে। এখান থেকেই মিশরের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এবং এই অঞ্চলে অন্তত ১শ’ মিলিয়ন মানুষের পানির উৎস এই নীলনদ। সেটিও হুমকির মুখে পড়বে।
তবে সোমবার মিশরের পানি বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘তিন দেশ শীঘ্রই আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার নিকট প্রতিবেদন জামা দেবে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিলে একটি সামিটের আয়োজন করবেন।’