সর্বশেষঃ

কোন ওয়াজে কে যাবেন, তাও নিয়ন্ত্রণ করতেন মামুনুলরা: পুলিশ

দেশের কোন মাহফিলে কে ওয়াজ করবেন, সেটাও হেফাজতে ইসলামের নেতাদের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

সম্প্রতি সংগঠনটির কয়েক নেতাকে গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম।

তিনি শনিবার গ্লোবালটাইম টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন নামের এই সংগঠনটি বেশ তৎপর। হেফাজতের উগ্রপন্থি নেতারা এর নেতৃত্ব দিচ্ছে। কোথাও কোন ওয়াজ মাহফিল করতে হলে তাদের মাধ্যমে আসতে আয়োজকদের বাধ্য করা হয়।”

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন’র নেতৃত্বে ছিলেন দাবি করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহবুব বলেন, “আগে শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী এই সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না, সম্প্রতি তাকে যুক্ত করা হয়েছে।”

নরেন্দ্র মোদীর সফরকেন্দ্রিক বিক্ষোভ থেকে সহিংসতার ঘটনায় সম্প্রতি মামুনুল হকসহ হেফাজতের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তাদের গ্রেপ্তারের পর এখন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, হেফাজত বড় ধরনের অপপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল; যা দৃশ্যত এতদিন অজানা ছিল তাদের।

হেফাজতের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর প্রায় অর্ধশতটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর মধ্যে নাশকতার ১২টি মামলা রয়েছে।

এসব মামলায় হেফাজতের ১৫জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে মাহবুব আলম বলেন, তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ তথ্য পাচ্ছেন তারা।

তিনি বলেন, “পাকিস্তানের ‘তেহেরিক-ই-লাব্বায়িক’ নামের সংগঠনের আদলে তারা হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশকে গঠন করে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো এদেশকে গড়ে তুলতে চায়। যার পেছনে জামাত-শিবির রয়েছে।”

শনিবার গ্রেপ্তার হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সাবেক সভাপতি।

মাহবুব বলেন, “হেফাজত ইসলামীর অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের সাথে জড়িত। মূলত তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছে হেফাজতকে।

“আর এ কারণে ২০১৩ সালে তারা নাশকতা চালিয়ে সরকার পতনের যে চেষ্টা চালিয়েছিল, একইভাবে ভারতের নরেন্দ্র মোদীর সফরকে ঘিরে দেশব্যাপী নাশকতার মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পরিকল্পনা তাদের ছিল।”

২০১৩ সালে হেফাজতের আমির ছিলেন শাহ আহমদ শফী। তিনি গত বছর মারা যান। তার মৃত্যুর পর হেফাজতে ‘উগ্রপন্থিরা’ নিয়ন্ত্রণে আসে বলে দাবি করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহবুব।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে যে সব ভিডিও ফুটেজ, অডিও তারা সংগ্রহ করেছেন, তাতে সরকার, রাষ্ট্রবিরোধী‘অনেক তথ্যপ্রমাণ’ পাওয়া গেছে।

হেফাজত দেশের অনুদান সংগ্রহের পাশাপাশি প্রবাসীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আসত বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহবুব।

তিনি বলেন, “তাদের অর্থের উৎস খোঁজা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।”

হেফাজতে ইসলাম মাদ্রাসার শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে উল্লেখ করে মাহবুব বলেন, “এই সংগঠনের নেতারা নিরীহ শিশু ছাত্রদের তাদের বড় পুঁজি বলে মনে করে। এই ছাত্রদের কোনো কারণ ছাড়াই রাস্তায় বের করে আনা যায় এবং তারা কাজেও লাগায়।”

হেফাজতের যে সব নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং আরও যারা হচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

“বিশেষ টিম গঠন করে এগুলো যাচাই করা হচ্ছে।”

সহিংসতা আর হেফাজত নেতাদের ওয়াজের ভিডিও খুঁজছে পুলিশ