সর্বশেষঃ

৬০ লাখ টাকা দেনমোহরে সেই সহকর্মীকে বিয়ে করলেন এসপি মোক্তার

ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়েরকারী সেই নারী সহকর্মীকে (ভুক্তভোগী পুলিশ পরিদর্শক) বিয়ে করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার (এসপি) মোক্তার হোসেন। ৬০ লাখ টাকা দেনমোহরে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য ধর্ষণ মামলাটির আপসনামায় সই করেছেন বাদী।

সোমবার (৭ মার্চ) ঢাকার ৭ নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক হাবিবুর রহমান সিদ্দিকীর আদালতে বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর পৃথক আবেদনে বিয়ে ও আপসের কথা জানানো হয়।

গত বছরের ১২ আগস্ট ঢাকার ৭ নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের আদালতে এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি করেন তার সহকর্মী ওই পরিদর্শক। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আবেদনটি উত্তরা পূর্ব থানাকে মামলা হিসেবে (এফআইআর) গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। মামলার সময় বাগেরহাট জেলার দায়িত্বে ছিলেন মোক্তার। মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে ছুটিতে যান তিনি।

মামলাটির তদন্ত শেষে গত ৩০ জানুয়ারি মোক্তারকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডের পরিদর্শক জসিম উদ্দিন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ২০ জনকে। সোমবার ওই চার্জশিট গ্রহণের দিন ধার্য ছিল।

এদিন ঢাকার ৭ নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন এসপি মোক্তার। আবেদনে আইনজীবী ৬০ লাখ টাকা দেনমোহরে বাদীর সঙ্গে মোক্তারের বিয়ে হয়েছে বলে জানান এবং আদালতে একটি নিকাহনামা দাখিল করেন। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মামলার বাদীও। পরে আদালত এসপি মোক্তারের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

আবেদনে মোক্তারের আইনজীবী উল্লেখ করেন, গত ১৯ ডিসেম্বর একটি আপসনামা সম্পাদনপূর্বক বাদী ও বিবাদীর বিয়ে সম্পন্ন হয়। মামলার বাদী পরে মামলা চালাবেন না বলে আপসনামায় উল্লেখ করেন। আসামির বিরুদ্ধে কোথাও কোনো মামলা নেই বিধায় তিনি জামিন পেতে হকদার। আসামি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি। মানবিক বিবেচনায় আসামির জামিনের প্রার্থনা করছি।

মামলার বাদী ওই নারী পরিদর্শকও আইনজীবীর মাধ্যমে একটি আবেদন দাখিল করেন আদালতে। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আপসনামা সম্পাদনপূর্বক বাদী ও বিবাদীর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বাদী আদালতে সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক নন। সাক্ষীরাও আদালতে সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক নন। সেজন্য বাদী মামলা চালাতে আগ্রহী নন, যা আদালতকে অবগত করা হলো।

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আফরোজা ফারহানা আহম্মেদ অরেঞ্জ জাগো নিউজকে বলেন, আজ এসপি মোক্তার আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বাদী ও বিবাদীর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আপস-মীমাংসা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে বিয়ে হয়েছে বলেও আদালতে কাগজ দাখিল করেন মোক্তার। আদালত শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

ধর্ষণ মামলা আপসযোগ্য কি না, জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, ধর্ষণ মামলার আইনে আপসের বিধান নেই। তবে সংসার করার শর্তে অনেক সময় আদালত মানবিক বিবেচনায় বিষয়টি দেখেন।

এর আগে দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালে বাদী ও আসামি দুজনই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর দুপুরে আসামি বাদীর বাসায় তার ব্যবহৃত গাড়ির চাবি চান। বাদী চাবি ইউনিফর্মের পকেট থেকে আনতে গেলে আসামি পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরেন এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরে এ ঘটনা কাউকে না জানাতে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দেন। এর দুদিন পর ২২ ডিসেম্বর আসামি পুনরায় আগের ঘটনা ভুল বোঝাবুঝির কথা বলে বাদীর বাসায় যান। কিন্তু ওইদিনও বাদীকে তিনি জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এ ঘটনাও কাউকে না জানাতে আসামি বাদীকে হুমকি দেন। যদি বাদী কাউকে ধর্ষণের ঘটনা জানান, তাহলে তার ক্ষতি করার হুমকিও দেওয়া হয়।

অভিযোগ তদন্তের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেছিলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে নারী সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০ এর ৯(১) ধারায় চার্জশিট দাখিল করেছি। মোক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিরও আবেদন করেছি।