সর্বশেষঃ

হজ অনুষ্ঠান নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীন সৌদি

পবিত্র হজের বাকি মাত্র ৪০ দিন। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে ৩০ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ইহরাম বেঁধে মিনায় যাত্রার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ২৮ জুলাই (৬ জিলহজ)। অথচ হজ বাতিল না সীমিত আকারে করবে, সে বিষয়ে সৌদি সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে সৌদি আরব যখন এ ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দৌদুল্যমানতার আবর্তে পড়েছে, তখন বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতির সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ইতিমধ্যে হজযাত্রা বাতিল করেছে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, সেনেগাল, কম্বোডিয়া, ব্রুনেই, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ। ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ লাখ মুসল্লির হজে যাওয়ার কোটা রয়েছে। মুসলিম দেশগুলো সৌদি আরবকে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ক্রমাগত চাপ দেওয়ার পর তারা বলেছিল ১৫ জুনের মধ্যে জানাবে। তবে বুধবার সৌদি আরব সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আরো সপ্তাহখানেক করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

রয়টার্স, এএফপিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, এ বছর হজ বাতিল করতে পারে সৌদি আরব। সে ক্ষেত্রে একেবারে বাতিল না করে সৌদি বাসিন্দারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিতভাবে হজ পালন করতে পারেন। মসজিদে নববি সীমিতভাবে খুলে দেওয়া হলেও পবিত্র কাবা এখনো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। তাওয়াফ ও ওমরাহও বন্ধ রাখা হয়েছে। সৌদি আরব আন্তর্জাতিক রুটের নিয়মিত প্যাসেঞ্জার উড়োজাহাজ চলাচলও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে। করোনা সংক্রমণে ভয়াবহ দশা সৌদির। গতকাল অবধি বিশ্বের ২১৩টি দেশের মধ্যে সৌদি আরব শীর্ষ ১৬ নম্বরে অবস্থান করছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল ইসলাম জানান, বারবার তাগাদা দিলেও সৌদি সরকার হজের কোনো সিদ্ধান্তই জানায়নি বাংলাদেশকে। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাদের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। বাতিল না করে সীমিত পরিসরে হজের সিদ্ধান্ত হলে এক্ষেত্রে আমাদেরও প্রস্তুতির বিষয় আছে। করোনা সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে হজযাত্রার সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। হজযাত্রী পরিবহনে বিমান মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতির দরকার। সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা রয়েছে। তার পরেই হজের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ যেসব মুসলিম দেশ সীমিতভাবে হলেও হজযাত্রী পাঠাতে আগ্রহী, তারা আছে অনিশ্চয়তায়। হজযাত্রী এবার যেতে পারবে কি না তা নিয়ে দেশের হজ এজেন্সিগুলো দুশ্চিন্তায় সময় পার করছে বলে জানান হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (হাব)-এর সভাপতি আলহাজ শাহাদাত হোসেন তসলিম।

এদিকে হজ অনুষ্ঠানে সৌদির সিদ্ধান্ত না আসায় চূড়ান্ত নিবন্ধন করা ৬৫ হাজার ৫১২ হজযাত্রী রয়েছেন গভীর উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠায়। হজের বাকিও বেশি দিন নেই। দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে তাদের মধ্যে শঙ্কা। এ সময়ে হজের অনুমতি হলে তড়িঘড়ি করে আদৌ তারা হজে যেতে পারবেন কি না, সংশয়ে রয়েছেন। দুশ্চিন্তায় আছেন হজ এজেন্সি মালিকরাও। হজ বাতিল হলে বড়ো ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আল নাসের বলেন, হজযাত্রী কেন আমরা এজেন্সি মালিকরাও তো উদ্বিগ্ন আছি। হাতে আমাদের সময়ও খুব কম। অথচ আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। ভালো-মন্দ যে কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসা তো দরকার। হজ বাতিল হলে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বেন বলেও জানান তিনি।

হজ থেকে সৌদি সরকারের প্রতি বছর আয় হয় ১২ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। এদিকে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে হজ বাতিল হলে কিংবা বাংলাদেশ সরকার হজযাত্রী পাঠাতে না পারলে হজযাত্রীদের টাকা ফেরত দেবে ধর্মমন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ধর্মসচিব মো. নূরুল ইসলাম জানান, যেতে না পারলে হজযাত্রীরা টাকা ফেরত পাবেন। যদি কেউ পরের বছর যেতে চান, তাও করতে পারবেন। টাকা নিয়ে হয়রানি কিংবা প্রতারণার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে হজযাত্রীদের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *