সর্বশেষঃ

অবহেলিত ফল বিলাতি গাবঃ

গ্লোবাল টাইম ২৪ডটকম

নতুন প্রজন্মের কাছে বিলাতিগাব অপরিচিত একটি ফল। শহর অঞ্চলে ফলটি কম দেখা যায়। তবে গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে প্রচুর দেখা যায়। পাকলে ফলটি দেখতে খুব সুন্দর। লাল ও লাল-গোলাপী রঙের এবং কাঁচা অবস্থায় সবুজাভ বাদামী রঙের হয়ে থাকে।

বিলাতিগাব গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Diospyros discolor বা Diospyros blancoi যা Ebenaceae পরিবারভুক্ত। ইংরেজিতে একে Mabolo, Korean mango বা Velvet-apple বলা হয়। এটি সুস্বাদু ও মিষ্টি ফল। এর আদি নিবাস ফিলিপাইন ও চীনে। বাংলাদেশ ছাড়া ভারতেও পাওয়া যায়।

গাব গাছ সর্বোচ্চ ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর কান্ড কালচে, যার ব্যাস ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। পাতা সবুজ ও চকচকে হয়। একই গাছে আলাদা আলাদাভাবে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ফোটে। নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল ফোটে এবং মে-আগস্ট মাসে ফল পাকে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এই ফলটি প্রচুর ফলে।

কাঁচা অবস্থায় ফলটির উপরিভাগ মখমলের মতো। ফলটি পাকলে ভেতরটা সাদা। তিন-চারটি কালো রঙের বীজ থাকে। পাকা ফল থেকে তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়। ফলের ভেতরে শিরা যুক্ত মিষ্টি শাঁস রয়েছে।
আপেলের আকারের এই ফলগুলো গোলাকার হয় প্রায় ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা ও ২-৪ ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত এবং ওজনে ১০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। বিলাতি গাব দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামগঞ্জে জনপ্রিয় একটি ফল।

পুষ্টিগুণঃ

বিলাতী গাব বেশ পুষ্টিকর। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম বিলাতী গাবে খাদ্যশক্তি রয়েছে ৬০ কিলোক্যালরি। যা জাতীয় ফল কাঁঠাল, বাংলার আপেলখ্যাত পেয়ারা, কাগজী লেবু, কমলা, জাম, পেঁপে, আনারস, এমন আমলকীর চেয়ে বেশি।
এছাড়া সমপরিমাণ বিলাতী গাবে পানীয় অংশ রয়েছে ৮৪ দশমিক ৯ গ্রাম, খনিজ পাদার্থ ০ দশমিক ৮ গ্রাম, আঁশ ১ দশমিক ৫ গ্রাম, আমিষ ০ দশমিক ৫ গ্রাম, চর্বি ০ দশমিক ১ গ্রাম, শকরা ১৪ দশমিক ৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০ দশমিক শূন্য ১ মিলিগ্রাম এবং লৌহ রয়েছে ০ দশমিক ২ মিলিগ্রাম।

ওষুধি গুণঃ

১। বিলাতী গাব বেলের মতোই উপকারী। আয়ুর্বেদীয় মতে, এ ফল রক্ত-আমাশয় ও উদরাময় রোগে ব্যবহৃত হয়। মুখের ও গলার ঘা ধৌতকরণের কাজেও বিলাতী গাব ফলদায়ক বলে চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে। তবে এসব গুণ নিয়ে সর্বসাধারণের এতটুকু ভ্রুক্ষেপ নেই।

২। হাইপারটেনশন কমায়:
উচ্চ পটাসিয়াম উপাদান থাকায় রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটায়। এটি শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর চাপ কমায় এমনকি রক্তচাপ্ও কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা আঁশ শরীরে কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়া্ও রক্ত চাপ, হার্টঅ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৩। রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটায়:
গাবে থাকা আয়রন দেহে লোহিত কণিকার কোষের উন্নতি ঘটায়। দেহের গুরুত্বপূর্ণ টিস্যুগুলোতে অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধি করে। এছাড়া এটি পেশি গঠন, চুলের বৃদ্ধি এবং হজমক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।

৪। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
গাবে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘এ’ রয়েছে। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি, ত্বকের জন্য ক্ষতিকর রেডিক্যাল কমিয়ে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই দুই ভিটামিন বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, জটিল রোগ প্রতিরোধ এবং ত্বকের সুস্থতার জন্য বেশ কার‌্যকরী।

৫। হজমে সহায়ক:
গাবে প্রচুর আঁশ থাকার কারণে এটি হজমক্রিয়া উন্নতিতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রিক জাতীয় সমস্যা দূর করে।

৬। ত্বকের যত্ন:
গাব খেলে বা এর তৈরি রূপচর্চার উপাদান ৬। ব্যবহার করলে ত্বকের প্রদাহ কমায়।

৭। গাব খেলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পা্ওয়া যায়, বুকে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না এবং অ্যাজমা দূর করে। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকার কারণে রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।

বাড়ছে কদরঃ

বিলাতী গাবের কদর বাড়ছে-এর জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণা করার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয় না। ফুটপাতে, ফলের দোকানে যখন অন্যান্য ফলের পাশাপাশি এ ফলটিও তাকে শোভা পায় তখনই বড় সত্য বলে পরিগণিত হয়। ভেতরে বড় বড় বীচি থাকলেও মাংসল ফল খেতে বেশ ভালোই লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিন দিন বিলাতী গাবের চাহিদা বাড়ছে। অনেক সাহেবরাও কিনে নিয়ে যায়।

ড. উজ্জল কুমার নাথ
প্রফেসর
কৌলীতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহ