সর্বশেষঃ

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের নির্দেশ : কী করবে মিয়ানমার

মিয়ানমার সরকারের জন্য ২৩ মের চূড়ান্ত সময়সীমার কাঁটা একেবারে সামনে চলে এসেছে। এই তারিখের মধ্যেই মিয়ানমারকে গণহত্যা থেকে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য ২০২০ সালের প্রথম চার মাসে কী কী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার দৃশ্যগ্রাহ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) গাম্বিয়ার আবেদনের প্রেক্ষাপটে ওই তারিখ নির্ধারণ করেছিল। আবেদনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের গণহত্যার প্রকৃত ও আসন্ন ঝুঁকিতে থাকা রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছিল।
২০১৭ সালের শেষ দিকে মুসলিম রোহিঙ্গা নাগরিকদের ওপর মিয়ানমার সামরিক বাহিনী, সীমান্ত রক্ষা বাহিনী ও সশস্ত্র বৌদ্ধ রাখাইনরা চরম সহিংসতার সৃষ্টি করেছিল। এর পর জাতিসঙ্ঘ জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় গাম্বিয়া আইসিজেতে ওই আবেদন করে।

আইসিজে মিয়ানমার সরকারকে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে বলে। এসবের মধ্যে রয়েছে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য সম্ভব সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী যাতে কোনো ধরনের গণহত্যা চালাতে না পারে বা গণহত্যা চালানোর ষড়যন্ত্র করতে না পারে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গণহত্যার ইন্ধন দিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বলা হয় মিয়ানমার সরকারকে।
এছাড়া গণহত্যার প্রমাণ মুছে ফেলার যেকোনো ধরনের প্রয়াস চালানো থেকে বিরত থাকতে ও রাখতে মিয়ানমারকে নির্দেশ দেয়া হয়।
তবে রোহিঙ্গাদের জন্য দুঃখজনক বিষয় হলো, আইজেসির নির্দেশ পালনে মিয়ানমার অর্থপূর্ণ কোনা পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি।

এমনকি ৮ এপ্রিল মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির এক নির্দেশনায় বলা হয় যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, অন্য কোনো নিরাপত্তা বাহিনী বা বেসামরিক নাগরিক বা স্থানীয় লোকজন কোনো ধরনের গণহত্যামূলক কার্যক্রমে জড়িত নয়।
অথচ বাস্তবে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী দীর্ঘ দিন ধরে রোহিঙ্গা জনসাধারণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে আসছে। মিয়ানমার সরকারের জন্য আরেকটি খারাপ বিষয় হলো, তারা রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছে না।
তাছাড়া ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর যে ব্যাপকভিত্তিক ও পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করা হয়েছে, তার অনেক সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী শত শত রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংস করে, হাজার হাজার অধিবাসীকে হত্যা করে, হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করে, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
এর জের ধরে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ রক্ষা করতে বাংলাদেশের কক্সবাজারে চলে আসে। তারা এখনো সেখানে অবস্থান করছে। আর রাখাইনে এখনো ছয় লাখ রোহিঙ্গা অবস্থঅন করছে। তারা নতুন সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

আর সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইন ও চিন রাজ্যে শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

গত ২৯ এপ্রিল মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ বিশেষ র্যা পোর্টিয়ার ইয়াহি লি অভিযোগ করেন, কোভিড-১৯ মহামারিকে অজুহাত হিসেবে গ্রহণ করে মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক নজরকে অন্য দিকে সরিয়ে নিতে চাইছে।
এবারের ২৩ মে মিয়ানমার সরকারের জন্য চিন্তাভাবনা করার দিন। তাকে অবশেষে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেবে, তাদের দুর্দশা লাঘব করবে, এমন অর্থপূর্ণ আন্তর্জাতিক জবাবদিহি প্রক্রিয়া দাখিল করতে হবে কিংবা তাকে কূটনৈতিক রক্ষণাত্মক পদ্ধতি অবলম্বন করে বাস্তবতা অস্বীকার ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে যেতে হবে। তবে তা করা হলে তারা খুনি অচ্ছ্যুত রাষ্ট্র হিসেবেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত হবে।

সূত্র : এশিয়া টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *