সর্বশেষঃ

করোনায় তারকা হাসপাতালের ডাকাতি: ৮হাজার টাকার কেবিন এখন ২৫ হাজার টাকা!

এই মহামারির সময়েও প্রাইভেট হাসপাতালগুলো যা করছে তাকে দিনেদুপুরে ডাকাতি বললেও কম বলা হয়!
প্রায় প্রতিটি প্রাইভেট হাসপাতাল ‘কভিড সার্ভিস চার্জ’ নামে নতুন একটি ডাকাতি খাত চালু করেছে!
পান্থপথের একটি তারকা হাসপাতাল এই খাত বাবদ প্রতিদিন প্রতিটি রুগির কাছ থেকে চার্জ রাখছে ১০ হাজার টাকা!
গুলশান ও ধানমন্ডির তারকা হাসপাতালসহ অন্যান্য কর্পোরেট হাসপাতালগুলোও এমন উচ্চহারে ‘কভিড সার্ভিস চার্জ’ রাখছে!

পান্থপথের তারকা হাসপাতালে যে কেবিনের ভাড়া আগে ছিলো সাড়ে আট হাজার টাকা সেই একই কেবিনের ভাড়া এখন প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা!
গুলশানের হাসপাতালে যে কেবিনের ভাড়া ছিলো আট হাজার টাকা তা এখন পঁচিশ হাজার টাকা!

অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতেও মোটামুটি একই অবস্থা।

এইসব হাসপাতালের কেবিন ভাড়া নিয়ে অবশ্য আমার মাথা ব্যাথা নেই কারন যেসব ধনীরা অবৈধ উপায়ে অর্জিত তাদের বিপুল অর্থবিত্ত খরচ করার জায়গা পায় না তারাই এসব হাসপাতালের কেবিনে যায় বা যাবে!
এদের কাছে সবসময়ই জরুরি চিকিৎসাসেবার চেয়ে বিলাশবহুল আতিথেয়তাটাই-ই জরুরি!

হতাশার ব্যাপার হলো,
প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সাধারন ওয়ার্ডগুলোতেও একইরকমভাবে উচ্চভাড়ার মচ্ছব চলছে!

পরিসংখ্যান বলছে,
বাংলাদেশের মোট রুগিশয্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশরই যোগান আসে এইসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো থেকে।

পরিতাপের বিষয় হলো,
করোনার এই মহামারিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রুগিশয্যার অভাবে বেড খালি না পেয়ে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও এইসব প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন এবং অনেকটা সর্বশান্ত হয়েই বাসায় ফিরছেন!

এক খবরে দেখলাম একজন বৃদ্ধ রুগি ধানমন্ডির এক হাসপাতালে’র একটি সাধারন ওয়ার্ডে তিনদিন ভর্তি ছিলেন।
এই তিনদিনে তার বিল এসেছে ৯২ হাজার টাকা!

এই তিনদিনে তার কোন অক্সিজেনই দেওয়া হয়নি(অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজনই হয়নি)। তারপরও তার বিলে অক্সিজেন বাবদ ১৭ হাজার টাকা যোগ করে দেওয়া হয়েছে!

ব্যাপারটা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা বিল থেকে ১৭ হাজার টাকা ডিডাক্ট করে ৭৫ হাজার টাকা রেখেছে।
তার মানে রুগির লোক যদি সচেতন না হতো তাহলে অক্সিজেন বাবদ এই ১৭ হাজার টাকা তারা হাপিশ করে দিতো!
এভাবেই তারা রুগির কাছ থেকে দিনেদুপুরে ডাকাতি করছে, লুট করছে, ছিনতাই করছে!

রুগি বা সাধারন জনগণ মনে করছে চিকিৎসকরাই এই ডাকাতি করছে!
অথচ বাস্তবতা কিন্তু পুরোপুরি উল্টো!

এইসব হাসপাতালে আগে যতজন চিকিৎসক চাকরি করতেন এখনো ততজনই চাকরি করছেন বরং কিছু কিছু হাসপাতাল কর্মীছাটাইয়ের মাধ্যমে চিকিৎসক সংখ্যা আগের চেয়ে আরো কমিয়ে নিয়ে এসেছে।
এবং এইসব হাসপাতালে যেসব চিকিৎসকরা চাকরি করছেন তাদের কারোরই বেতন-বোনাস বাড়েনি বরং অনেকক্ষেত্রেই আরো কমেছে বা দেওয়াই হয়নি!

সুতরাং এটা জলের মতো পরিস্কার যে,
এইসব হাসপাতালের ডাকাতির বাড়তি এই টাকা মালিকপক্ষই খাচ্ছে!

চিকিৎসকরা এই বাড়তি টাকার কোন ভাগ কখনোই চায়নি, এখনো চায় না।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো,
রুগি ও সাধারন জনগণের দৃষ্টিতে চিকিৎসকরাই আবারো ‘কসাই’ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছেন!

একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি মনে করি,
প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর এইরুপ নির্লজ্জ ডাকাতি ও চরম স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করা আমাদের প্রতিটি চিকিৎসকের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
_________________________

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ।
সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ,স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ।
Doctor ,t Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University
Former Secretary General বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ,দিনাজপুর।
Studied MBBS. at Dinajpur Medical College, Dinajpur

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *