সর্বশেষঃ

তুরস্কে যেভাবে উত্থান হয় এরদোয়ানের

অনলাইন ডেস্ক
তুরস্কে এবং বিদেশে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সম্পর্কে নানা ধরনের মতামত রয়েছে। তাকে নব্য-অটোমান ‘সুলতান’ হিসেবে যেমন বিবেচনা করা হয়, তেমনি কারও কারও চোখে তিনি একজন স্বৈরাচারী নেতা। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই ইসলামপন্থিদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন তিনি। পাশাপাশি ন্যাটোতে তার নেতৃত্বে বড় ধরনের অবদান রাখছে তুরস্ক।
আসুন জেনে নেওয়াক যাক এরদোয়ানের উত্থান সম্পর্কে-

ইস্তাম্বুলের কারাবন্দি মেয়র
তুরস্কে ইসলামপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দল ওয়েলফেয়ার পার্টিতে নিজের অবস্থান দ্রুতই পাকাপোক্ত করেছিলেন এরদোয়ান। ১৯৯৪ সালে তিনি সেই দল থেকে ইস্তাম্বুলের মেয়রও নির্বাচিত হন। কিন্তু এরদোয়ান মেয়র হওয়ার চার বছরের মাথায় সেই দলটিকে সে দেশের সরকার তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করে। এরপর জনসমক্ষে বিতর্কিত কবিতা আবৃত্তির দায়ে জেলে যান এরদোয়ান। চার মাস জেল খাটেন তিনি।

নতুন দল, নতুন সম্ভাবনা
তুরস্কের একেপি পার্টির সহপ্রতিষ্ঠাতা এরদোয়ান। ২০০২ সালের নির্বাচনে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। আর ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।

দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরগুলোতে এরদোয়ান দেশবাসীকে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে মনোযোগী হন। তবে কেউ কেউ এটাও মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে ধর্মের মিশ্রণ ঘটানোয় ভূমিকা রেখেছেন।

ইসলামপন্থিদের স্বার্থ রক্ষা
যদিও তুরস্কের সংবিধান দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করে, তারপরও এরদোয়ান কট্টর ইসলামপন্থিদের মন জয়ের নানা চেষ্টা করেছেন। তুরস্কের এই শীর্ষনেতা একসময় বলেছিলেন যে, তার লক্ষ্যগুলোর একটি হচ্ছে এক ‘ধার্মিক প্রজন্ম’ গড়ে তোলা। এরদোয়ানের সমর্থকরা এই লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, কেননা, তারা মনে করেন, ধর্মচর্চা করা মুসলমানরা তুরস্কে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল।

ক্যু থেকে রক্ষা
২০১৬ সালের জুলাইয়ে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনীর এক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। তবে সেই ঘটনায় দু’শ’র বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং সেনা সদস্য নিহত হন। সেই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এরদোয়ান আরও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেন।

দেশজুড়ে অভিযান
ব্যর্থ সেই সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করে তুর্কি কর্তৃপক্ষ। এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, স্কুল এবং গণমাধ্যম থেকে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। এরদোয়ান সেই সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা এবং তার প্রাক্তন সঙ্গী ফেতুল্লাহ গুলেনের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন।

বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ
যদিও নিজের দেশে এবং বিদেশে বসবাসরত তুর্কিদের একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে এরদোয়ানের প্রতি, তা সত্ত্বেও তিনি তার কঠোর নীতি এবং কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোয় কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আফরিনে মারাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করেন এরদোয়ান, যার সমালোচনা করে মানবাধিকা সংস্থাগুলো।

এক নতুন যুগ?
২০১৪ সাল থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর, কিছুদিন আগে নির্বাচনে জয়ী হয়ে এর্দোয়ান তার অবস্থান আবারও মজবুত করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জুনের নির্বাচনের মাধ্যমে তুরস্কে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। তবে সেটা ভালো না মন্দ তা সময়ই বলে দেবে।

ব্যাপক ক্ষমতাধর
২০১৭ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে দেশটির সংবিধান সংশোধন করা হয়। সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় তুরস্ক। ২০১৮ সালের ২৪ জুন নতুন করে ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। দেশটির ইতিহাসে এতো ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট এর আগে আসেননি। শপথ নেওয়ার দিন নিজের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- একেপির সদস্যদের এরদোয়ান বলেন, ‘তুরস্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে’। সূত্র: ডয়েচে ভেলে