সর্বশেষঃ

ত্রাণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী, নয়ছয় চেয়ারম্যানের, ব্যবস্থার আশ্বাস মন্ত্রীর

আম্পানের আঘাতে বাঁধ ভেঙ্গে পানিবন্দী মানুষ আজও ভাঙ্গাগড়া বাঁধ মেরামতে কাজ করে চলেছে। প্রতিদিন জোয়ারভাটার সাথে মোকাবেলা করে হাঁপিয়ে উঠলেও নিজেদের বাপ-দাদার ভিটা রক্ষা করতে একমাস ধরে পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এর মধ্যেই স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সরকারও যথেষ্ট সহায়তা করছে। কিন্তু সরকারি সহায়তা নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দিনের পর দিন কাজ করেও প্রাপ্য সহায়তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ অস্বীকার করছেন জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু জেলা প্রশাসন এসব অভিযোগের তদন্ত করে বিচারের আশ্বাস দিয়েছে।

গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বিশেষ করে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় নদীতে বৃদ্ধি পাওয়া পানির তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়। আজও তাদের বসতভিটায় খেলছে জোয়ার ভাটা। জোয়ারের পানি ঠেকাতে রাত দিন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতে কাজ করে যাচ্ছে। কিছু জায়গা বাঁধ বাঁধা গেলেও অনেক এলাকা বাঁধ বাঁধা সম্ভব হয়নি। ভাটায় বাঁধ মেরামত করে উঠতে না উঠতে আবারও জোয়ারের পানিতে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তারপরও থেমে নেই তারা, ভাটা এলেই আবারও চেষ্টা চলে বাঁধ বাঁধার। অথচ সরকারি ভাবে এখনো বাঁধ মেরামতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এদিকে এত কষ্টের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তার ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাই বাঁধ মেরামতে সরকারি পদক্ষেপসহ ত্রাণ বিতরণে অনিয়মে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি এলাকাবাসীর। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ করে আশাশুনি প্রতাপনগর এপিএস ডিগ্রী কলেজ ২য় বর্ষের ছাত্র তরিকুল ইসলাম বলেন, উপদ্রুত এলাকায় যাদের ত্রাণ পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছে না। টেকসই বাঁধ নির্মাণসহ ত্রাণের সুষ্ঠু বণ্টনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এতদিন পানিবন্দী থাকলেও আজও সরকারিভাবে বাঁধ মেরামতের কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় হতাশা পুরো এলাকায়।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ থেকে আশাশুনি উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নে ৩৩৬ মেট্রিক টন চালের মধ্যে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রতাপনগর ইউনিয়নে ৭ হাজার পরিবারের ৭ হাজার ৬৮৫ জনের বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মির্জা কামরুজ্জামন সময় নিউজকে বলেন, আমার এলাকায় তিন কিলোমিটার বাঁধ একেবারে বিলীন। এর মধ্যে দুই জায়গায় খাল হয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত চেয়ারম্যান এই ওয়ার্ডে আসেনি। আর সরকারিভাবে মাত্র ৭০০ পরিবারকে চাল দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় এক তরুণ একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, সাত দিন কাজ করেছি। সাত দিনে আমাদের এক দিনের চাউল দিয়েছে। তাও মাত্র সাত কেজি।
অপর এক সংখ্যালঘু বৃদ্ধা বলেন, আমরা তিনটি হিন্দু পরিবার আছি। আমরা কিছুই পাইনি।
আরেক ব্যক্তি বলেন, ১৫ দিন কাজ করে এক দিন চাউল পেয়েছে। তাও সবাই না। যেভাবে তালিকা দিয়েছে সেভাবে পেয়েছে।
স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, যেসব এলাকায় প্লাবিত হয়নি সেখানে ত্রাণ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের কাছে কথা বলতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বক্তব্য দিতে রাজি না। এ বিষয়ে ডিসি ও ইউএনও এর সঙ্গে কথা বলেন। এলাকার মানুষ অভিযোগ করছে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এলাকার লোক যা বলে তা আপনি লেখেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না ‘
অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, অনিয়ম যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এসমস্ত বরাদ্দ সঠিকভাবে বাস্তবায় ও পর্যবেক্ষণে ব্যবস্থা হচ্ছে।
ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল।
আর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিম এটাকে স্যাবোটাজ উল্লেখ করে বলেছেন, পানিবন্দী প্রত্যেকের বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে জনপ্রতিনিধিরা।
বাঁধ মেরামতে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানালেন সাতক্ষীরা ডিভিশন-২ পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী এস কে সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *