সর্বশেষঃ

বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণ বাঙালির মুক্তির সনদ

আজ ঐতিহাসিক সাতই মার্চ। ৭০ এর ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করেন। মার্চের এক তারিখে তিনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দিলে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল হয়ে ওঠে।

শুরু হয় হরতাল, অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, ৭ মার্চ রোববার রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা হবে। এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালি জাতিকে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনা।

তার সেই কালজয়ী ভাষণে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল সমগ্র জাতি। সাতই মার্চের ভাষণের পর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। তাই স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ওই ভাষণের আবেদন এতোটুকু কমেনি।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সকাল থেকেই জনস্রোত মিলিত হয় ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে যা আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ১০ লক্ষাধিক মানুষ বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখে পরবর্তী নির্দেশনা শোনার অপেক্ষায়। বেলা তিনটার কিছু পরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে জনসভায় আসেন বঙ্গবন্ধু।

ছাত্রসমাজসহ দলের ভেতর থেকে স্বাধীনতার ঘোষণার চাপ, আর ঘোষণা এলে জনসভায় বোমা পড়বে.. সামরিক জান্তার হুমকি। এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ভাষণটি দেন।

রাজনৈতিক সহকর্মীদের মতামত, দুর্দশাগ্রস্ত বিপুল মানুষের প্রত্যাশার চাপ নিয়ে কোন স্কিপট ছাড়াই দিক নির্দেশনা দিতে থাকেন শেখ মুজিব। ইতিহাসবিদ মনে করেন–শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো স্বাধীনতার কথাটি এমনভাবে উচ্চারন করা, যেন বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগ না উঠাতে পারে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি।

১৯৪৭ থেকে ৭১ এর মার্চ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির পাকিস্তানিদের সঙ্গে চলার অভিজ্ঞতার করুন প্রসঙ্গে টেনে করনীয় নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দেন শেখ মুজিব।
তিনি বলেন, “যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ”।

ইতিহাসবিদরা মনে করেন, ভাষণে মানুষকে উজ্জীবিত করার কোন উপাদানের এতোটুকু ঘাটতি রাখেননি বঙ্গবন্ধু। জাতির ক্রান্তিকালে এতো সংক্ষিপ্ত সময়ে এমন প্রাঞ্জলভাবে প্রসঙ্গ উপস্থাপন, দিক-নির্দেশনা ও সাহস জোগানো নজিরবিহীন বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা।

ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালে অক্টোবরে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। এদিকে ৭ মার্চ দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সকাল ৭টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন তিনি। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন শেখ হাসিনা। পরে সকাল ৮টায় শ্রদ্ধা জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এর আগে, সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করে আওয়ামী লীগ। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।