সর্বশেষঃ

ব্যাংক ডাকাতি করতে হ্যাকার আর্মি গড়েছে উত্তর কোরিয়া

শুধু পশ্চিমা শত্রুদের কুপোকাত করা নয় চুরিকৃত অর্থ পরমাণু প্রকল্পের জন্যেও ব্যয় করে তারা
পরমাণু অস্ত্র ও দূরপাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে আগে থেকেই বিশ্ববাসীর আতঙ্ক উত্তর কোরিয়া। সাইবার যুদ্ধেও পিছিয়ে নেই এশিয়ার নিভৃত এই দেশটি।

এবার ব্যাংক ডাকাতি করতে একটি পুরো হ্যাকার আর্মি গড়েছে একনায়ক কিম জং উনের দেশ। শুধু তাই নয়, বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাগিয়ে নিচ্ছে এই হ্যাকার আর্মি।

উত্তর কোরিয়া অর্থনৈতিকভাবে একটি দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু তাদের পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। পরমাণু অস্ত্র ও ব্যালাস্টিক মিসাইলের উন্নয়নে পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে দেশটির সরকার। তরুণ নেতা কিম জং উনের শাসনামলে তা আরও গতি পেয়েছে।

এজন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের বহু নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে পিয়ংইয়ং। কিমকে পরমাণু অস্ত্রের উচ্চাভিলাস থেকে বিরত রাখতে গত কয়েক বছর ধরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। এই ফাঁকে গোপনে ও ধীরে ধীরে নিজেদের সাইবার সক্ষমতা গড়ছে উত্তর কোরিয়া।

উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইতোমধ্যে হাজার হাজার হ্যাকার সেনা তৈরি করা হয়েছে। এদের প্রধান কাজ বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলোতে সাইবার হামলা চালানো আর কাড়ি কাড়ি ডলার হাতিয়ে নেওয়া।

উত্তর কোরিয়ার এসব কর্মকাণ্ডকে ‘বড় হুমকি’ হিসাবে দেখা হচ্ছে। এ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন এমন একজন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ও সিউলের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্রাটেজিয়ের গবেষক ওহ ইল-সিওক বলছেন, ‘উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ও সামরিক কর্মসূচি নিশ্চিতভাবেই একটি দীর্ঘমেয়াদি হুমকি। কিন্তু তাদের সাইবার হুমকিগুলো একেবারেই আশু আর বাস্তব।’ উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা কম খরচে অধিক কার্যকরী সাইবার হামলা পরিচালনা করে থাকে। এসব সাইবার হামলার উদ্দেশ্য শুধু পশ্চিমা শত্রুদের কুপোকাত করা নয়, একই সঙ্গে চুরিকৃত অর্থ পরমাণু প্রকল্পের জন্যেও ব্যয় করে তারা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পিয়ংইয়ংয়ের সাইবার হামলার মূল লক্ষ্য। সাইবার হামলায় যত বেশি অর্থ চুরি করতে পারবে তাদের সামরিক বাহিনী তত শক্তিশালী হবে।

উত্তর কোরিয়ায় জীবনযাত্রার নিুমান এবং বেকারত্বের উচ্চহার সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সংখ্যক নাগরিকের রাষ্ট্রীয় খরচে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ শিক্ষা দেয় দেশটি। প্রযুক্তিগত শিক্ষা গ্রহণের পর এসব লোক দেশটির সাইবার সামরিক সংস্থায় যোগ দেয়। উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীতে হাজার হাজার সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রয়েছে। এমনকি প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষার্থীদের বাছাই করে সামরিক বাহিনীতে বিশেষ মর্যাদায় নিয়োগ দেওয়া হয়।

উত্তর কোরিয়ায় আড়াই শতাধিক স্কুল রয়েছে; যেখানে প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এসব স্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচশ জনকে বাছাই করে পরবর্তী ধাপে অন্য দুটি অ্যাডভান্সড স্কুলে পাঠানো হয়। উত্তর কোরিয়া নাগরিকদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেনাবাহিনীতে কাজ করা বাধ্যতামূলক। সাইবার গোয়েন্দাদের বেলায় নিয়ম ভিন্ন। তারা সরকারি প্রয়োজনে যে কোনো সময় একজন সাইবার সেনা সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বলা যেতেই পারে, উত্তর কোরিয়ার জন্য নিবেদিতপ্রাণ এবং নিয়মতান্ত্রিক একটি সাইবার আর্মি সর্বদাই প্রস্তুত থাকে।

পিয়ংইয়ং সবচেয়ে বেশি সাইবার হামলা চালায় সিউলে। একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে তৎপর। অন্যদিকে জবাবে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং সাইবার হামলা। মারাত্মক এসব সাইবার হামলা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো হ্যাকারদের অবস্থান।

এসব হ্যাকাররা উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী ছাড়াও ছড়িয়ে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। চীন রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তারা সাইবার হামলা পরিচালনা করে থাকে। তাদের অবস্থান শনাক্ত করা এক রকম দুরূহ ব্যাপার।