সর্বশেষঃ

ভারতবিরোধী উসকানি ও সাম্প্রদায়িকতা বিস্তারের অপচেষ্টা ববি হাজ্জাজের

দেশের স্বঘোষিত ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের পুত্র ববি হাজ্জাজ শুধু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোই নয়, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক নষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। তার ফেসবুকে দেওয়া বিভিন্ন স্ট্যাটাস ও সভা-সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য ও দলীয় পোস্টারের লেখা বিশ্লেষণেও এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এসব বিষয়ে তার উসকানিমূলক বক্তব্য ও মন্তব্যে অনেকের ধারণা, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সঙ্গে গোপন আঁতাতে এসব অপকর্মে লিপ্ত ববি হাজ্জাজ। গত মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জম্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগদান ঠেকাতে মাঠে নামেন ববি হাজ্জাজ। ৩ মার্চ এ বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সমাবেশ করেন তিনি। ওই সমাবেশের পোস্টারে তিনি লিখেন ‘ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের নির্লজ্জভাবে মুসলিম দমন, বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাস, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ভারতের উগ্র সহিংসতার বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার আহ্বান।’ ওই সময়ে তিনি নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘সে নো টু মোদি’। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ববি হাজ্জাজ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট গড়েন। জোটের নাম দেন ‘গণঐক্য’। নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে বেছে নেন মুসলিম লীগের প্রতীক ‘হারিকেন’। ২০১৯ সালে ববি হাজ্জাজ ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা নবাব স্যার সলিমুল্লাহর কবর জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন ববি হাজ্জাজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতে যাননি। মুসলিম লীগের সঙ্গে ঐক্য ঘোষণার পর তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের সঙ্গে তিনি ঐক্য করতে রাজি।’ গত বছর ৮ অক্টোবর ববি হাজ্জাজ বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি ক্ষুদ্র সমাবেশ করেন। সমাবেশে তিনি ভারতবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য রাখেন। নিজ দলের নামে ছাপানো পোস্টারে ববি হাজ্জাজ লিখেন, ‘ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গর্জনের প্রেরণা দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার দীপ্ত সৈনিক শহীদ আবরার।’ গত বছর ৭ সেপ্টম্বর ববি হাজ্জাজ কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে একটি আলোচনাসভা করেন। ওই আলোচনাসভার ব্যানারে লিখেন ‘ভারতের কাশ্মীরে মুসলিম নির্যাতন ও মুসলমানদের অধিকার হরণের প্রতিবাদে আলোচনাসভা।’ আলোচনাসভা থেকে তিনি ভারতসীমান্ত অভিমুখী যাত্রার ঘোষণা দেন। ওই দিনই তিনি ফেসবুকে ভারতবিরোধী এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি কাশ্মীরি জনগণের ওপর নির্যাতনের কথা বলেন এবং ভারতের তীব্র সমালোচনা করেন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধেও সরকার কেন যুদ্ধের ভাষায় কথা বলছে না- এ প্রশ্নও তোলেন। তিনি লিখেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে ১০/১৫ লক্ষ রোহিঙ্গাদের নিয়ে বড় ঝামেলায় আছি, যার সমাধান আওয়ামী লীগ সরকার করতে পারছে না। মিয়ানমারকে কোনো প্রকার হুমকি দিতেও তারা নারাজ। তা হলে মিয়ানমার কেন সমাধানে আসবে? বিশেষ করে ভারত চীন কেউ আমাদের হয়ে কথা বলছে না। ভারতের বিজেপি সরকার তো উল্টো এই সুযোগ নিতে চেষ্টা করছে আসামে এনআরসি দিয়ে। এনডিএম (নিজের দল) ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। আমরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সীমান্ত অভিমুখে যাত্রা করে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠব।’ ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি চট্টগ্রামে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সীমান্ত অভিমুখে যাত্রা করার প্রস্তুতিমূলক সভায় বক্তব্য দেন। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘সরকার সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রেখেছেন বলেই আজ মিয়ানমারের কাছেও আমাদের মাথা নত হয়ে থাকতে হয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও চলছে নীরব মুসলিম বিতাড়ন ও নিধন। মোদি সরকার চরদখলের মতো কাশ্মীর দখল করে নিয়েছে। আসামে বিতর্কিত নাগরিকত্বের তালিকা হয়েছে। এখান থেকেও বাংলাদেশে মুসলমানদের পুশব্যাক করবে।’ গত বছর ৯ নভেম্বর নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়েও উসকানিমূলক মন্তব্য করেন। ভারত বিরোধিতার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ববি হাজ্জাজ বলেন,‘ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী, তাদের বড় ভাইসুলভ আচরণ রয়েছে। এটা ত্যাগ করতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *