সর্বশেষঃ

ভারত-চীনের সীমান্ত সংঘাতে রাশিয়া কি মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত?

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঠিক আট দিনের মাথায় আগামিকাল রাশিয়া, চীন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন।

তিন দেশের এই বৈঠক অনেক আগে থেকে নির্ধারিত হয়ে থাকলেও লাদাখের সীমান্ত সংঘাতের পর ভারত তাতে যোগ দিতে খুব একটা রাজি ছিল না, কিন্তু রাশিয়ার অনুরোধেই শেষ পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই বৈঠকে আসতে সম্মত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন, ভারত ও চীনের মধ্যেকার সংঘাতে রাশিয়া মধ্যস্থর ভূমিকা পালন করতে খুবই আগ্রহী – আর সে কারণেই এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তারা এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক বাতিল করেনি।

বস্তুত রাশিয়া-ইন্ডিয়া-চায়না বা আরআইসি ট্রাইল্যাটারালের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সেই ২০০২ সাল থেকে।
আর চলতি জুন মাসের ২২-২৩ তারিখ নাগাদ সেই জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম বৈঠকও হবে বলে আগে থেকেই ঠিক ছিল।
কিন্তু গত সপ্তাহে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত কুড়িজন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর সেই বৈঠকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

তবে আরআইসি জোটের বর্তমান চেয়ার রাশিয়া মনে করছে, এই বৈঠক চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে সহায়ক হতে পারে – ফলে মস্কোর অনুরোধেই শেষ পর্যন্ত দিল্লি এই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগদানের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, “রাশিয়াই চেয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের বিজয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আরআইসি-র এই বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হোক।”
“পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এই ভার্চুয়াল কনফারেন্সে সামিল হবেন।”
“এই বৈঠকে বৈশ্বিক মহামারির বর্তমান অবস্থা, বিশ্ব নিরাপত্তার সামনে কী কী হুমকি আছে, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও আরআইসি দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।”

ভারত-চীন বিরোধে কী হবে রাশিয়ার ভূমিকা?

আরআইসি একটি ত্রিপাক্ষিক ফোরাম হলেও গালওয়ান সংঘাতের মতো দ্বিপাক্ষিক ইস্যু যে আগামিকালের বৈঠকে এড়ানো হবে না – তা অবশ্য পর্যবেক্ষকরা ধরেই নিচ্ছেন।
চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধের পেছনে যেসব কারণ
বস্তুত আরআইসি অ্যাক্সিস বা রুশ-চীন-ভারত অক্ষশক্তির সবচেয়ে সরব সমর্থক রাশিয়াই, যাতে এই গোটা অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব খর্ব করা যেতে পারে।
আর সে জন্য জোটের দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ থাকাটাও খুব জরুরি।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া কি ভারত ও চীনের সংঘাতে নাক গলাতে চাইবে?

দিল্লিতে রুশ দূতাবাসের উপপ্রধান রোমান বাবুশকিন বলছেন, এলএসি-র পরিস্থিতি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন হলেও রাশিয়া জানে যে এই ধরনের বিরোধ নিরসনের জন্য ভারত ও চীনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বা মেকানিজম আছে।
“তা ছাড়া দুই দেশের মধ্যে নানা স্তরে ও বিশেষ প্রতিনিধিদের মধ্যেও আলোচনার কাঠামো আছে, এমন কী দুদেশের শীর্ষ নেতারাও নিয়মিত অনানুষ্ঠানিক সামিটে মিলিত হন।”
“কাজেই রাশিয়া আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের দুই বন্ধু দেশ এই বিরোধ নিজেরাই মিটিয়ে ফেলতে পারবে – তবে সেই প্রক্রিয়ায় উৎসাহ দিতে মস্কো সব সময় প্রস্তুত থাকবে!”, বলছেন মি বাবুশকিন।
তবে সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়ে রাশিয়া প্রকাশ্যে খুব একটা সরব হতে রাজি নয় সঙ্গত কারণেই।

‘বৈঠক হচ্ছে রাশিয়ার আগ্রহেই’

তবে আরআইসি ফোরামের জন্মলগ্নে যিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন, সেই কানওয়াল সিবাল মনে করেন রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই।
মি সিবাল বিবিসিকে বলছিলেন, “রাশিয়া ভীষণভাবে চেয়েছিল এই বৈঠক যাতে ভেস্তে না-যায়।”
“সীমান্ত ইস্যুতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী আর সমর্থন যদিও দুটো আলাদা ব্যাপার, আমি বলব তারা কীভাবে এই সমস্যাকে দেখছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

“ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে নাকচ করাটা একেবারেই ঠিক নয় – এবং আমি যতটুকু জানতে পারছি, আরআইসির এই প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে ভারত চীনের সামনে কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন রাখতে চাইবে, তবে সেটা কূটনৈতিক শিষ্টাটার মেনেই।”
“এবং রাশিয়া ও চীনের নিজেদের মধ্যে সম্পর্কটা যেরকম, তাতে আপনি রাশিয়াকে অবশ্যই এখানে একটা সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চাইবেন”, বলছিলেন কানওয়াল সিবাল।

এই পটভূমিতেই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-ও আজ বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে মস্কোর পথে রওনা হয়েছেন – যা কোভিড মহামারির মধ্যে গত তিন মাসে ভারতের কোনও ক্যাবিনেট মন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর।
তিনি বুধবার মস্কোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভিক্ট্রি প্যারেডের অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন – যে ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে বর্তমান সঙ্কটে ভারতও রাশিয়ার ভূমিকাকে কিছুতেই খাটো করে দেখছে না।